বর্তমান ডাক্তারী পেশা ও কিছু ধ্রুব সত্য কথা ___
ডাক্তার হওয়ার জন্য
এম.বি.বি.এস ভর্তির শুরু থেকে
ক্লাস, প্রতিদিন আইটেম, কার্ড, টার্ম ও একের পর এক প্রফ পরীক্ষা ।
কেড়ে নেয় জীবনের সব আনন্দ!
ফার্স্ট প্রফের এনাটমির জন্য,
গ্রেস এনাটমি
কানিং হাম, দত্তের বই,
বিডি চুরাশিয়া, স্নেল নিউরোএনাটমি
নীটার কালার এটলাস,
হিস্টোলজি, ওস্টিওলোজি , এমব্রায়োলজি
ফিজিওলজির জন্য গেনং, গাইটন সহ
আরো কত মেইনবই, গাইড বই পড়তে হয়!
বায়োকেমেস্ট্রির জন্য লিপিনকট, হার্পার, সত্যনারায়ণসহ কত লেকচার নোট পড়তে হয়!
যে পড়ে সে জানে!
এর মাঝে আরেক প্যারা কমিউনিটি মেডিসিন!
পাবলিক হেলথের ডেফিনেশন মুখস্ত করতে করতে জান শেষ হয়ে যায়,
ডেফিনেশন আর মুখস্ত হয় না!
সেকেন্ড প্রফ সে তো আইটেমের পাহাড়
ফার্মার কেটজাং , মাইক্রো , রবিনস প্যাথো, মরা মানুষের গবেষনা রেড্ডির
ফরেনসিক পাশের জন্য কত বই, লেকচার পড়তে সেটা আল্লাহ মালুম!
ফাইনাল প্রফ সেতো এম বি বি এস নাটকের শেষ দৃশ্য!
থার্ড ইয়ারের ডেভিডসন - হ্যারিসনের মেডিসিন,
ম্যাকলয়েডস এর ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশন,
আব্দুল্লাহ স্যারের শর্ট কেইস, লং কেইস ,
ইসিজি, রেডিওলজি
বেইলী লাভের সার্জারী,
দত্তের সার্জারী,
আই, ই এন টির কত বই,
কত লেকচার !
সে তো বলে শেষ করা যাবে না!
সব বই আর লেকচার কাঁধে নিয়ে নিয়মিত ক্লাসে আসলে,
নিশ্চিত ঐ ছাত্রের ডাক্তার হওয়ার পূর্বেই কাইপোসিস ডেভেলাপ করবে ।
আইটেম সব ক্লিয়ার না হলে,
কার্ডে বসার সুযোগ নেই,
সব কার্ড পাশ না করলে,
টার্মে বসার সুযোগ নেই,
সব টার্মে পাশ না করলে
ভার্সিটির অধীনে অনুষ্ঠিত প্রফে বসার সুযোগ নেই,
সব ক্লিয়ার থাকার পর যদি পার্সেন্টেজ ৭৫ এর নীচে হয়
প্রফে বসার আশাটা গুড়ে বালি হয়ে যায়!
ফার্স্ট প্রফ নিয়মিত পাশ না করলে
ডাক্তার হওয়ার আশা হতাশা হয়ে দাঁড়ায়!
নিয়মিত প্রফে বসতে না পারলে
হতাশা কল্পনার বাহিরে চলে যায়!
সব শেষে শুরু
ফাইনাল প্রফ নামক মহাযজ্ঞ!
পাশ করে ডাক্তার হওয়াটা তত ইজি হয়!
যদি স্যারদের সাথে কোনো পার্সোনাল ক্লেশ থাকে তাহলে তো পাশ করাটা দু:স্বপ্ন হয়ে দাঁড়ায়।
ফার্স্ট প্রফ, সেকেন্ড প্রফ, থার্ড প্রফ (বর্তমানে)
ও ফাইনাল প্রফ পাশ করলে
ডাক্তার হওয়ার আশা টা পূর্ণ হয়ে যাবে!
এম বি বি এস পাশের পর শুরু হয়
ইন্টার্ণশীপ লাইফ,
ইন্টার্ণশীপ লাইফে রোস্টার অনুযায়ী প্রতিটা ওয়ার্ডে ডিউটি শেষে
লগ বুকে ওয়ার্ডের সি এ, প্রফেসর, কো অর্ডিনেটর ও বিভাগীয় প্রধানের সই নিয়ে লগবুক জমা দিতে হয় ডিরেক্টর অফিসে,
ইন্টার্ণ লাইফ শেষে প্রিন্সিপ্যাল ও ডাইরেক্টরের সইযুক্ত ইন্টার্ণশীপ সার্টিফিকেটের জন্য অপেক্ষা করতে হবে সপ্তাহ দুয়েক!
এখানেই শেষ নয়!
এতোকিছু পাড়ি দিয়েও ডাক্তারী পেশা প্র্যাকটিস করতে পারবেন না,
প্র্যাক্টিসের জন্য আপনাকে বিএমডিসির রেজিষ্ট্রেশন সনদ সংগ্রহ করতে হবে ,
রেজিষ্ট্রেশনের জন্য নগদ টাকা,
এম বি বি এস পাশের ভার্সিটি সার্টিফিকেট ও
ইন্টার্নশীপ ট্রেনিং এর সার্টিফিকেট জমা দিয়ে অপেক্ষা করতে হবে সপ্তাহ দুয়েক থেকে মাসেক!
বিএমডিসির রেজিষ্ট্রেশন সনদ পাওয়ার পর
ডাক্তার হিসেবে প্র্যাক্টিস করার বৈধতা পাবেন।
পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন সে তো মহারতী মেধাবীদের স্বপ্ন ভংগের ভিন্নরূপ!
এফ সি পি এস ফার্স্ট পার্ট পাশ করে
ট্রেনিং এ ঢুকবেন বিনামূল্যে মানব সেবা করে যাবেন... বাপের টাকায় নিজের থাকা খাওয়া দাওয়াসহ যাবতীয় খরচ চালাবেন।
বছরের পর বছর অনাহারী নামক মেডিকেল অফিসার হয়ে বিনামূল্যে মানব সেবা দিয়ে
চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাশ হবার সম্ভাবনা ৫ পার্সেন্ট!
এফ সি পি এস ডিগ্রীটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে,
ঠিক ধরি মাছ না ছুই পানি এর উলঠো!
পড়তে থাকবেন আর ট্রেনিং করতে থাকবেন,
পাশ সে তো স্বপ্নের বিষয়!
পাশের হার এতই নগন্য অনেকে কয়েক বছর ট্রেনিং করে এফসিপিএস ছেড়ে দিয়ে
এম ডি / এম এস রেসিডেন্সী করছেন না হয় দেশ ছেড়ে বিদেশ পাড়ি জমাচ্ছেন!
কয়েক বছর আগেও
এফ সি পি এস এর পাশাপাশি অন্যান্য ডিগ্রীগুলো কনটিনিউ করা যেত!
আর এখন সে সুযোগটাও শূন্য।!
মেডিকেলের পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ব্যবস্থা এতটা কঠিন করে ফেলেছেন,
হতাশা ছাড়া মিটে কি আশা !
এত কিছুর পরে যখন মহত পেশায় নিয়োজিত হবেন, দেখবেন
অন্যান্য পেশার বন্ধু বান্ধবরা বাড়ি গাড়ি করে দেশ বিদেশ ভ্রমণে পাড়ি দিচ্ছেন।
নানা উতসব আনন্দে দিন কাটাচ্ছেন,
তখন আপনি এতোটাই ব্যস্ত হয়ে উঠবেন,
দেশ বিদেশ তো দূরের কথা পরিবারের সদস্যদের সাথেও ঠিকমতো সময় দিতে পারবেন না! আপনার অনুপস্থিথিতেই
শত আচার অনুষ্ঠান আনন্দ শেষ হয়ে যাবে!
আপনি শুধু আফসোস করে যাবেন!
এতো কিছু ত্যাগের পর বুড়ো বয়সে পাবেন
স্বান্ত্বনা স্বরূপ কিছুটা খ্যাতি আর অর্থ বিত্ত !
উপরের সব কিছুই ধ্রুব সত্য!
কল্পনা নহে !!
লেখা- ডাঃ স্বাধীন
email - DoctorShadhin@gmail.com