লেখা - ডাঃ স্বাধীন
অনেকে বলছেন ,যেখানে মেডিকেলের প্রফ পরীক্ষার রিটেন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় ,
সেখানে এডমিশন টেস্ট কোনো ব্যাপার না !
আমি তাদের সাথে সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করছি ,
মেডিকেল শুধু এম.সি.কিউ কিংবা রিটেন দিয়ে শেষ নয় ,
মেডিকেলে পাশ করতে হলে আপনাকে নিয়মিত আইটেম পাশ করতে হবে তাও আবার স্যার - ম্যাডামদের সামনে ভাইভা দিয়ে ।
আইটেম সব ক্লিয়ার হলে আপনাকে মোকাবিলা করতে হবে কার্ড পরীক্ষা-
সেখানে রিটেন - ভাইভা - প্রাক্টিক্যাল তথা OSPE , শর্ট কেইস - লং কেইস সব আলাদা আলাদা পাশ করতে হবে ,
একই নিয়মে কয়েকটি কার্ড পাশ করার পর আপনাকে টার্ম পাশ করতে হবে ,
সব টার্ম পরীক্ষা পাশ করার পর আপনাকে লড়তে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের
অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রফ পরীক্ষা তথা পেশাগত পরীক্ষা ,
সে পেশাগত পরীক্ষার রিটেন খাতা চলে যাবে ভার্সিটিতে ,
রিটেন শেষ হলে একযোগে শুরু হবে সেন্ট্রাল OSPE পরীক্ষা ,
সে পরীক্ষা এক দলকে রুমে বন্ধী করে আরেকদলের বেল বাজিয়ে ষ্টেশন - টু ষ্টেশন পরীক্ষা শুরু হয় , প্রতিটা ষ্টেশনে বিভিন্ন সিনারিও, এক্স রে ফিল্ম, ই সি জি , ফটোগ্রাফ , ভিসেরা , বোনস, ডাটা , অপারশনের ইন্সট্রুমেন্ট , লেবেলহীন ড্রাগ ও বিভিন্ন প্রসিডিউর থাকে ।
প্রতিটা ষ্টেশন ২-৩ মিনিটে আইডেনটিফাই করে ,
ঐ রিলেটেড উল্লেখিত প্রশ্নের উত্তর দিয়ে উত্তর পত্র ঝুড়িতে রাখতে হয় ,
এভাবে এক দলের প্রতিটা ষ্টেশনের সময় শেষ হলে ,
বন্ধী রাখা পরীক্ষার্থীদের OSPE রুমে প্রবেশ করানো হয় ।
২-৩ টা ষ্টেশন যদি ভুল করে আসে তবে
প্রফ পাশের সব সাধনায় ওখানেই শেষ ।
বিশেষ করে সার্জারী ফার্স্ট পার্টে ষ্টশনের প্রশ্নগুলোর উত্তর অনেক বড় হওয়ায়,
উত্তর লেখার পূর্বেই বেল বেজে উঠে - সময় ফুরিয়ে যায় ।
এই কঠিন সার্কাস শেষ হলে কয়েকদিনপর শুরু হয় ,
মেডিকেলীয় আসল পরীক্ষা ভাইভা- শর্ট কেইস , লং কেইস ।
ভাইভা নিতে আসেন ভার্সিটি থেকে সিলেক্ট করা স্যারেরা
অমুক মেডিকেলের প্রফেসর তমুক মেডিকেলের এক্সটার্নাল হয়ে ভাইভা নিতে আসেন ।
যে সব স্যারকে মেডিকেল পরীক্ষার্থী ভাইভার পূর্বে আগে কখনো দেখে নি
,
এমন আজানা , আচেনা স্যারদের সামনে পরীক্ষা দিতে অনেক নার্ভাসনেস কাজ করে , যতো ভালো প্রিপারেশন থাকুক না কেনো ।
ভাইভাতে এমনো হয় অনেক ভালো ছাত্রেরও থ্রট ব্লক হয়ে যায় ,
সব কিছু জানার পরও অতি নার্ভাসনেসের কারনে নিজের নাম বলতে আটকে যায় ।
অনেকের ভাইভাতে এমনও হয় ,
প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর ভালো করে পারে ,
কিন্তু গুটিকয়েকে যা ভালো করে পড়ে নাই
সেগুলোর বিশদ উত্তর জানতে চাই এক্সটার্নাল ।
যদি সেকেন্ডের জন্য
কোনো পরীক্ষার্থীর উপর স্যারের বেড ইমপ্রেশন তথা বদ নজর পড়ে ,
তাহলে কথায় নেই ...
মুহুর্তেই জান কোরবান - নিশ্চিত পরীক্ষায় ফেল ।
যে ছেলেটি ভাইভা বোর্ডে এসে ২- ৩ নাম্বারের জন্য ফেল করে
তার দুঃখের অন্ত নেই ।
যে ছেলেটি ক্লাসের ফার্স্ট হয়েও রিটেন - ভাইভাতে অনেক ভালো নাম্বার পেয়ে পাশ করার পর , যখন শুনে OSPE তে ফেল ।
ছেলেটি অনেক মেধাবী হউক কিংবা ভালো হউক
OSPE তে ফেল করায়
তখন সে পরীক্ষার্থীর রেজাল্ট দাঁড়ায় ফেল ।
ফলাফল - তাকে ৬ মাসের বন্দী কারাঘারে জীবন পার করে
আবার সাপ্লিমেন্টারী পরীক্ষায় বসে ভাইভা- রিটেন- central OSPE শর্ট কেইস - লং কেইস সব পাশ করতে হবে ।
ভাইভা রিটেনে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে সেট্রাল OSPE তে ফেল করেছে এমন অনেক নজির মেডিকেলে প্রতিনিয়ত ঘটছে ।
আবার অনেকের ভাগ্যটা এতটাই খারাপ
প্রায় সবকিছু পাশ করেও কেবল শর্ট কেইস কিংবা লং কেইসে ফেল করায়
পুরো রেজাল্ট ফেল চলে আসে ।
পাশ মার্ক ৬০ নাম্বারের চেয়ে ২-৪ কম পাওয়ায় কত ছাত্রের জীবন থেকে
হারিয়ে যাচ্ছে কত মূল্যবান সময় !!
স্কুল কলেজে ফার্স্ট যে কোনোদিন ফেল করে নি ,
সে মেডিকেলে এসে ফেল করবে , এটাই স্বাভাবিক !
মেডিকেলে এসে কোনো না কোনো পরীক্ষায় ফেল করে নি ,
এমন ছাত্রের সংখ্যা অতি নগন্য ।
মেডিকেলে পাশ ফেল কোনো ব্যাপারই না ,
Failure is the Pillar of Medical Science.
এম.বি.বি.এস যত কঠিন হউক না কেনো,
পরীক্ষা দিতে দিতে
একদিন না একদিন এম.বি.বি.এস পাশ হবেই।
সো নিরাশ হবেন না, ডাক্তার একদিন হবেনই ।