নির্বাচিত ব্লগ

বর্গী মানে কি? কাদের কে বর্গী বলে ডাকা হতো?

বাংলায় বর্গী আক্রমণের সেই কবিতার পুরোটা কতজন জানেন? ছেলে ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো বর্গী এল দেশে বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কিসে।। ধান ফুর...

এসব ডাক্তারদের অবদান তুলে ধরার কেউ নেই....


আপনার জন্ম যদি ১৯৯২ সালের পর হয়ে থাকে
এবং শিশু অবস্থায় ছোট-খাট জ্বর হবার পর জ্বর
কমানোর ঔষধ সেবন করেও আপনি যদি বেঁচে
থাকেন, তাহলে আপনার বেঁচে থাকার
পেছনে এই মানুষটার সামান্য অবদান থাকার
সম্ভাবনা রয়েছে। যাদের সন্তান বা ছোট
ভাইবোন ঐ সময়ের পর জন্মগ্রহণ করেছেন,
তাদের জন্যও এই কথাটা প্রযোজ্য।

বাংলাদেশে শিশুদের জ্বরের ঔষধ
হিসেবে প্যারাসিটামল সিরাপ প্রচলিত।
১৯৯২ সাল পর্যন্ত বেশ কিছু কোম্পানীর
প্যারাসিটামল সিরাপের মধ্যে বিষাক্ত
একটি উপাদান ছিল যার কারণে অনেক শিশু
প্যারাসিটামল সিরাপ গ্রহণের পর কিডনি
রোগে মারা গেছে। ডা. হানিফ সর্ব প্রথম
প্যারাসিটামল সিরাপের মধ্যে এই
বিষাক্ত উপাদানটি সনাক্ত করেন এবং এর
কারণে শিশুদের কিডনি রোগে মৃত্যুর কারণ
নির্নয় করেন।

১৯৮২ সালে ডা. হানিফ তৎকালীন পিজি
হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় শিশুদের
কিডনি ডায়ালাইসিস বিভাগে দায়িত্ব
পালনের সময় লক্ষ্য করেন যে অনেক শিশু
কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার
জন্য আসছে এবং তাদের সবাই শেষ পর্যন্ত
মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে। বিষয়টির কারণ তখন
তিনি বা হাসপাতালের কোন ডাক্তারই
ধরতে পারেন নি। কিছুদিন পর তিনি উচ্চ
শিক্ষার্থে বিদেশে চলে যান। এর পর ৯০
সালের দিকে দেশে ফিরে এসেও তিনি
একই অবস্থা দেখতে পান। বিষয়টি তাঁকে
বিচলিত করে এবং বিস্তারিত অনুসন্ধান
করে দেখতে পান যে, এই কিডনি
রোগাক্রান্ত শিশুদের সবাই জ্বরে আক্রান্ত
হয়ে প্যারাসিটামল সিরাপ গ্রহণ করেছিল।
ডা. হানিফ বেশ কয়েকটি ঔষধ কোম্পানীর
তৈরী প্যারাসিটামল সিরাপ যুক্তরাষ্ট্রে
পরীক্ষার জন্য পাঠান এবং দেখতে পান যে,
কয়েকটি কোম্পানীর প্যারাসিটামল
সিরাপে বিষাক্ত ডাই-ইথিলিন গ্লাইকোল
রয়েছে যে কারণে শিশুদের কিডনি বিকল
হয়ে তারা মারা যাচ্ছে। তৎকালীন পিজি
হাসপাতাল বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে
দেখতে পায় কেবলমাত্র ১৯৮২ থেকে ১৯৯২
সময়কালে ঐ হাসপাতালেই প্রায় ২৭০০ শিশু
কিডনি বিকল হয়ে ডায়ালাইসিস করতে
এসে মৃত্যুবরণ করেছে। অন্যান্য হাসপাতালের
পরিসংখ্যান এবং হাসপাতালে চিকিৎসা
না নেয়া শিশুদের সংখ্যাটা বিবেচনায়
নিলে মৃত্যুর সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি
হবে বলেই ধরে নেয়া যায়।

বিষয়টি ধরা পরার পর ১৯৯২ সালে ড্রাগ
কোর্টে চারটি ঔষধ কোম্পানীর বিরুদ্ধে
মামলা হয়। বলা বাহুল্য ঔষধ কোম্পানীগুলো
বিত্তবানদের প্রতিষ্ঠান তাই তারা ১৯৯৪
সালে হাইকোর্টে গিয়ে মামলাটি
স্থগিত করে দেয়। শুধু তাই নয়, ড্রাগ কোর্টের
কর্মচারীদের সহায়তায় মামলার নথিপত্র
পর্যন্ত গায়েব করে দেয়া হয়। ২০০৯ সালে
যখন আবারো ডাই-ইথিলিন গ্লাইকোল
মিশ্রিত বিষাক্ত প্যারাসিটামল সিরাপ
সেবন করে নতুন করে কিছু শিশু আক্রান্ত হলো
তখন আবার সেই মামলা চালানোর ব্যবস্থা
করা হয় এবং সেটিও এই ডা. হানিফেরই
কারণে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এই ১৪ বছরে
বাংলাদেশ ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন বা
সরকারের এটর্নি জেনারেল কেউই
হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের
জন্য চেষ্টা করেন নাই।

যে ঔষধ কোম্পানীর প্যারাসিটামল সিরাপ
সেবন করে সবচেয়ে বেশি শিশু নিহত
হয়েছে সেই ঔষধ কোম্পানী এডফ্লাম এর
মালিক হেলনা পাশাকে ড্রাগ কোর্টের
রায়ে ২০১৪ সালের ২২ জুলাই ১০ বছরের
কারাদণ্ড দেয়া হয় কিন্তু মাত্র ৫২ দিন
কারাবাস করে তিনি একই বছর ১১ সেপ্টেম্বর
হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে বেড় হয়ে
আসেন। মামলায় নিযুক্ত সরকারী ডেপুটি
এটর্নি জেনারেল শফিউল বাশার
ভাণ্ডারী হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে
আপিল করেননি। শত শত শিশু নিহতের জন্য
দায়ী একজন মানুষ এভাবেই শাস্তি থেকে
রক্ষা পেয়ে যান।

এই বিষাক্ত প্যারাসিটামল সিরাপের
বিষয়ে লেখালেখি করার কারণে এবং
বারবার বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর
পারাসিটামল সিরাপ পরীক্ষা করে তাতে
বিষাক্ত ডাই-ইথিলিন গ্লাইকোল সনাক্ত
করার কারণে ডা. হানিফকে কম ভোগান্তি
পোহাতে হয়নি। ঔষধ কোম্পানীগুলো
বারবার তাঁকে কোর্টে নিয়ে নিজেদের
উকিল দিয়ে হেনস্তা করেছে এবং তাঁকে
একঘরে করে রাখার চেষ্টা করেছে। ঘুষ
দিয়ে ড্রাগ কোর্টের কর্মচারীদের
সহায়তায় উনার সরবরাহ করা ল্যাবরেটরি
টেস্ট রিপোর্ট সরিয়ে ফেলে উনাকে
মিথ্যাবাদী এবং ঔষধ শিল্পের জন্য
ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত করার
চেষ্টাও করা হয়েছে।

কিন্তু ডা. হানিফ থেমে থাকেন নি।
তিনি নির্ভয়ে কোর্টে গিয়ে বারবার
তার গবেষণা প্রতিবেদন এবং ল্যাবরেটরি
টেস্টের ফলাফল উপস্থাপন করে শিশুদের
জীবন রক্ষার চেষ্টা করে গেছেন।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই গরিব।
এখানে চিকিৎসা পদ্ধতিও বেশ অদ্ভুত।
বেশি টাকা দিয়ে বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসকের কাছে না যেতে পারলেও
মানুষ কষ্ট করে সরকারী হাসপাতালে
যেতে চায় না। তারা প্রথমে চেষ্টা করে
রোগের বর্ননা দিয়ে কাছাকাছি কোন
ফার্মেসি হতে ঔষধ সংগ্রহ করতে। তাছাড়া
পল্লী চিকিৎসক, সরকারী হাসপাতাল বা
মেডিকেল সেন্টারগুলোর ডাক্তাররাও
অনেক সময় মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ
দের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অখ্যাত ঔষধ
কোম্পানীর ঔষধ প্রেসক্রাইব করে থাকেন।
এমন পরিস্থিতিতে বিষাক্ত ঔষধ সেবন করে
ঠিক কত শিশু মৃত্যুবরন করেছে, তা নির্নয় করা
আসলেই কঠিন একটা কাজ।

এই ঘটনা উন্নত কোন দেশে ঘটলে সরকার/
আদালত ঐ সব ঔষধ কোম্পানীগুলোকে বাধ্য
করত নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপুরণ দিতে।
এবং বিষাক্ত ঔষধ সনাক্ত করে লাখো শিশুর
জীবন রক্ষার জন্য ডা. হানিফ পেতেন
পুরষ্কার ও সম্মান।

বাংলাদেশে চলে তার নিজস্ব মডেলে।
তাই ঐসব ঔষধ কোম্পানীর বিরুদ্ধে
জরিমানা হয় না, শিশু হত্যাকারীরা
জামিনে বেড় হয়ে আসে, ক্ষতিপুরণের তো
প্রশ্নই আসে না, আর ডা. হানিফ রয়ে যান
উপেক্ষিত; অবহেলিত।

সরকার ডা. হানিফকে সম্মান না দেখাক।
আমি, আপনি এবং আমরা উনাকে সম্মানিত
করতে পারি আমাদের সমগ্র ভালবাসা
দিয়ে। আমার দুইটি সন্তান আছে। তারাও
শিশুকালে জ্বরে ভুগেছে এবং জ্বরের জন্য
ঔষধ সেবন করেছে। ওদের যে বিষাক্ত
প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন করতে হয়নি
তার জন্য আমি ডা. মোহাম্মদ হানিফ এর
কাছে কৃতজ্ঞ এবং ঋণী।


বিষাক্ত প্যারাসিটামল সিরাপ সংক্রান্ত ডা. হানিফের আর্টিকেল: http://goo.gl/Zz9MaK
গুগল স্কলারে ডা. হানিফের আর্টিকেলসমূহের লিংক: https://goo.gl/0M96eP




Share:

আর্কাইভ

সর্বশেষ ব্লগ

মেডিকেল কলেজ

ডাউনলোড

সকল