১০বছর আগে কেমিস্ট্রির যে স্যার পড়ার জন্য বকা দিয়েছিলো,
সে স্যার আজকে আমাকে বাহবা দিলো ...
টানা ২৪ ঘন্টা নিদ্রাহীন ছিলাম,
কিন্তু নিজেকে একটুও ক্লান্ত মনে হয় নি,
৬০৭ কেবিনে ভর্তি ক্যান্সারের রোগীর প্রেশার রাত ৩টার দিকে কমতে কমতে ৫০/২০ তে চলে আসলছিলো।
এত রাতে কি করি,
ইঞ্জেকশান ডোপামিন নরমাল স্যালাইনের সাথে পাম্প মেশিনে রোগী গায়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম,
তবুও ডা: আনিসুল আউয়াল স্যারকে ফোন দিয়ে শিওর হয়ে নিলাম,
এভাবে চালাবো নাকি এইচডিউতে পাঠাবো
স্যার বললো ৫০০ এম এল নরমাল স্যালাইনের সাথে ২ এ্যাম্পুল ডোপামিন পুশ করে ৩২ ড্রপসে মাইক্রোবুরেট সেট দিয়ে চালু করে, অবজার্ভেশন করে প্রেশার মেপে দেখিও,
স্যারের নির্দেশনা মেনে শুরু করলাম চিকিতসা,
ব্লাড প্রেশার কখনো ৭০/৪০,
কখনো ৮৫/৫০
এভাবে বাড়তে থাকলো,
সকাল ৭ টায় দেখলাম ১০০/৭০,
তখন খুব ভালো লাগলো,
আকরাম স্যারের হাতে ব্লাডের রিকোজিশন
দিয়ে দিলাম,
সকালে এক ব্যাগ রক্ত দেয়ার পর,
রোগীর ব্লাড প্রেশার হলো ১২০/৮০, যা
নরমাল।
নরমাল ব্লাড প্রেশার দেখে এতোটা ভালো লাগলো, স্যারকে খুশিতে বুঝাতে পারছিলাম না।
স্যারকেও খুব খুশি দেখাচ্ছিলো।
যাক ... ঘুমহীন রাতের কষ্টটা স্বার্থক হলো,
যে পেশেন্টির ব্লাড প্রেশার কমতে কমতে শুন্যের কোটায় গিয়ে পেশেন্ট শকে চলে যাচ্ছিলো,
সে পেশেন্টকে সন্ধ্যায় যখন
জিজ্ঞেস করলাম এখন কেমন লাগছে?
তিনি হেসে উত্তর দিলেন
ভালো লাগছে !
তুমি সারাটা রাত না ঘুমিয়ে আমার জন্য যা করেছো,
অন্যদের কে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে বলে,
এই ডাক্তার আকরামের ছাত্র ।
সারারাত আমার জন্য ঘুমায় নাই,
রোগীর মুখে হাসি দেখে কি যে আনন্দ লাগলো!
বলে বুঝাতে পারবো না।
রোগী সুলতানা কোরায়েশী সম্পর্কে আমাদের
প্রিয় সিটি কলেজের কেমিস্ট্রির সহকারি অধ্যাপক আকরাম স্যারের শ্বাশুড়ি
ও ডা: আনিসুল আউয়াল স্যারের মামী ।
আকরাম স্যারের সাথে ২৪ ঘন্টায়,
যত দেখা আর কথা হয়েছে
পুরো ২ বছরের ইন্টার লাইফেও হয় নাই ।
স্যার আপনাদের ভীষন মিস করছি...
বিশেষ করে কেমিস্ট্রির অধ্যাপক হযরত আলী স্যার কে, যার লেকচার করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম,
যিনি রসায়নকে খুব সহজেই আমাদের ব্রেনে বুনে দিয়েছিলেন, যিনি বর্তমানে সিটি কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।