রাত ১১টায় ইমার্জেন্সী থেকে কেবিনে একটা পেশেন্ট ভর্তি হয়েছে,
জ্বর ও টিবির হিস্টরি নিয়ে।
একজন প্রফেসরকে অন কল দেয়া হলো, তিনি চেম্বার শেষ করে রোগীকে দেখতে আসবেন বলেছেন,
কিন্তু রোগীর এটেনডেন্ট বার বার ডক্টরস রুমে এসে বলে,
স্যার কতক্ষণে আসবেন,
স্যারকে তাড়াতাড়ি আসতে বলেন,
এটেনডেন্টের ভংগিমা দেখে মনে হলো স্যার যেন উনার কেনা গোলাম!
স্যারের চেম্বারে ফোন দিলাম,
পিয়ন ধরে বললো স্যার রাতের খাবার খাচ্ছে, কিছুক্ষন পরে কল দিয়েন।
এটেন্ডেন্টকে বুঝিয়ে বললাম,
স্যার রাতের খাবার খাচ্ছে কিছুক্ষন পর কথা বলে জানাবো।
৫ মিনিট পর এটেনডেন্ট আবার রুমে এসে বলে
উনি কি আসতেছেন?
নাকি অন্য কাউকে অন কল দিবেন,
আমি বললাম উনি প্রফেসর মানুষ,
আসবেন বলেছেন একটু ধৈর্য্য ধরেন।
উনার ৩ টা পেশেন্ট বাকি আছে,
ঐগুলো শেষ করেই আসবেন।
কিছুক্ষন পর আবারো ডক্টরস রুমে ঢুকেই বলে
উনি খাবার খেয়ে ২০ টা মিনিট আমার রোগীটা দেখে গেলে তো হয়।
চেম্বারের রোগীগুলো পরে দেখলে কি হয় !
আমি বললাম,
আপনি আপনারটা বললেন,
যে তিনটা রোগী সপ্তাহ খানেক আগে সিরিয়াল নিয়ে সন্ধ্যা থেকে স্যারের
চেম্বারের সামনে অপেক্ষা করছেন ওনাদের কথা কি ভেবে দেখেছেন?
এর মাঝে হুট করে বলে উঠে
ব্যবসা না করে
এমবিবিএস ডিগ্রী লাগিয়ে গ্রামে চেম্বার করলেই পারতাম!
এ কথা বলে চলে গেলো,
উনার কথার স্টাইল এমন ছিলো,
এমবিবিএস ডিগ্রীটা যেন হাতের মোয়া, চাইলেই পাওয়া যায়!
একটু পর আবার রুমে আসলো,
উনাকে একটু বসতে বললাম,
কিছু ঝাড়িও দিয়ে দিলাম,
আপনি ভাবছেন,
টাকা দিয়ে সব হয় !
এ ধারণা ভুল ....
ডাক্তারী ডিগ্রী এবং পেশা টাকা দিয়ে হয় না, এটা যোগ্যতা দিয়ে অর্জন করতে হয় !
যে স্যারের উপর আপনি রাগপোষন করে মূর্খের মত কথা বলেছেন,
জানেন কি!
উনি যদি ওনার মেধাকে ডাক্তারী পেশায় না দিয়ে অর্থের পিছনে ছুটতেন, এ বয়সে উনার দেশ বিদেশে মিনিমাম ২ - ৪ টা বাড়ি গাড়ি থাকতো !
হুম ...
আচ্ছা আপনি বলেন তো,
ডাক্তার কারা হয়!
চুপ,
নিশ্চয়ই ক্লাসের প্রথম সারির মেধাবীরাই!
হুম ...
নিশ্চয় সচিবদের চেয়ে প্রফেসরেরা মেধাবী!
হুম!
ডাক্তারেরা রাত বিরাত আরামের ঘুম হারাম করে রোগীর সেবা করে,
ঠিক তো ...
হুম ..
তাহলে কার সম্মান ও সম্মানী বেশি হওয়া উচিত!
নিশ্চয়ই ডাক্তারের!
হুম ...
আসলে আপনারা শক্তের ভক্ত নরমের যম থিওরী পছন্দ করেন !
আপনারা অফিস আদালতে গোপনে বামহাতে লাগিজভর্তি টাকা দিতে দ্বিধা করেন না,
কিন্তু ডাক্তারদের সামান্য সম্মানী নিয়ে টালবাহনা শুরু করেন,
সম্মানী নিলে কেউ বলেন
কসাই ,
কেউ বলেন ডাকাইত!
আমাদের স্যারেরা মেধাটাকে মানবসেবায় নিয়োজিত করেছেন,
এটাই কি উনাদের অপরাধ!
অভাগা জাতি আমরা,
মেধাবীদের
না দিই সম্মান
না দিই সম্মানী!
লেখা- ডাঃ স্বাধীন