বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন দেশের বিসিএস (বাংলাদেশ ক্যাডার সার্ভিস) পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যাডারভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে থাকে। বর্তমানে ২৮টি ক্যাডারে এ নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ক্যাডারগুলোতে রয়েছে বিবিধ মাত্রার বৈষম্য। কখনো পদোন্নতিবৈষম্য, কখনো কর্তৃত্ববৈষম্য।
এ ক্যাডারগুলোর মধ্যে কোনো কোনো ক্যাডার অত্যন্ত লোভনীয়। যেমন কোনো কোনো ক্যাডার রয়েছে যেগুলোতে বিত্তের পাহাড় গড়ে তোলা যায়, কেউ কেউ সেগুলো পছন্দ করেন, কেউ কেউ পছন্দ করেন ক্ষমতার দাপট, কেউ কেউ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার কারণে অপছন্দের ক্যাডার নেন। বিসিএস পরীক্ষায় সাধারণত পছন্দের প্রথম তালিকায় থাকে পররাষ্ট্র, দ্বিতীয়ত প্রশাসন, তৃতীয়ত পুলিশ। পছন্দের তালিকায় এ ক্রম ঠিক না থাকলেও এ তিনটির মধ্যেই সাধারণত প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় থাকে। এরপর আর ঠিক থাকে না।
পছন্দক্রম নিচের দিকে ক্রমাগত নামতে নামতে শিক্ষা ক্যাডার পর্যন্ত চলে আসে। তবে সংখ্যায় কম হলেও অনেকেই আছেন যাঁরা শিক্ষকতা ছাড়া অন্য কোনো ক্যাডার পছন্দ করেন না। এর বাইরে যাঁরা প্রকৌশলী, চিকিৎসক কিংবা কৃষিবিদ রয়েছেন তাঁরা সাধারণত টেকনিক্যাল ক্যাডারেই থাকেন। যাঁরা প্রকৌশলী, চিকিৎসক, কৃষিবিদ হন তাঁরা তুলনামূলক অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের চেয়ে বেশি মেধাবী। তবে কর্মক্ষেত্রে এই মেধাবীরা তুলনামূলক উপেক্ষিত। তার মধ্যে স্বাস্থ্য ক্যাডারের চেয়ে কর্মক্ষেত্রে অবহেলিত অবস্থা আর কোনোটিতেই নেই। বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের বিচারিক ক্ষমতা না থাকলেও তারা ব্রাহ্মণ অবস্থা থেকে সরে আসেনি।
ক্যাডারভিত্তিক বৈষম্যের নানা ধরন রয়েছে। যেমন ধরা যাক কোনো এক বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সব ক্যাডারের সব শাখায় কর্মকর্তা নিয়োগ হলো। একই দিনে পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলো, আবার একই দিনে তাঁদের যোগদান হলো। তাঁরা যদি তাঁদের পদোন্নতির শর্ত পূরণ করেন, তাহলে তাঁদের একই দিনে পদোন্নতি হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তা হচ্ছে না। পদোন্নতির ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা জটিলতা। যেমন স্বাস্থ্য ক্যাডারের পদোন্নতির জন্য তাঁদের অতিরিক্ত ডিগ্রি থাকা চাই। একই যোগ্যতা কিংবা চিকিৎসকদের চেয়ে কম যোগ্যতা নিয়ে পদোন্নতি পেয়ে হয়তো কেউ ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদে আসীন হচ্ছেন, আর চিকিৎসকদের হয়তো প্রবেশ পদেই সারা জীবন থাকতে হচ্ছে। শিক্ষা ক্যাডারসহ অনেক ক্যাডারের জন্য শুধু বিভাগীয় পরীক্ষা, বনিয়াদি কোর্স সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই পদোন্নতি হয়। প্রশাসন ক্যাডার, পুলিশ ক্যাডারসহ কিছু কিছু ক্যাডারের কিছুদিন বেশি প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হয়। সব ক্যাডারের জন্য যদি আর কোনো উচ্চতর ডিগ্রির প্রয়োজন না হয়, তাহলে স্বাস্থ্য ক্যাডারের জন্য কী কারণে অতিরিক্ত ডিগ্রির প্রয়োজন হবে? বিসিএস পরীক্ষার সময় যে যোগ্যতার ভিত্তিতে পরীক্ষা হয়, তাতে চিকিৎসা ক্যাডারের অনেকেই অন্য অনেক ক্যাডারের চেয়ে বেশি দিনের শিক্ষাজীবন নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। তার পরও তাঁদের পদোন্নতি পাওয়ার সময় আরও বেশি ডিগ্রি চেয়ে তাঁদের প্রতি অবহেলা প্রকাশ করা হয়েছে। চিকিৎসকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে উচ্চতর ডিগ্রিকে অধিক যোগ্যতা হিসেবে ধরে নিয়ে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তার সমান অথবা অধিক যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা ক্যাডারদের পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, যা হওয়া উচিত নয়। ২৮টি ক্যাডারের মধ্যে স্বাস্থ্য ক্যাডার একমাত্র ক্যাডার, যেখানে প্রবেশকালীন যোগ্যতার চেয়ে আরও অনেক বেশি ডিগ্রি প্রয়োজন হয় পদোন্নতিতে। অন্য সব ক্যাডারে প্রবেশকালীন যোগ্যতাই তাঁকে সর্বোচ্চ পদে আসীন করার জন্য যথেষ্ট।
ক্যাডারগুলোতে পদ শূন্য সাপেক্ষে পদোন্নতি হয়। দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পদ না থাকলেও স্বীয় পদেই ভাসমান পদোন্নতি দেওয়ার বিধান আছে। প্রয়োজনে ক্যাডার সার্ভিসে সেই বিধান কার্যকর করা যেতে পারে। শুধু নির্দিষ্ট ক্যাডার ধরে নয়, যখন পদোন্নতি হবে তখন সেই বিসিএসের সব কর্মকর্তার পদোন্নতি হওয়া প্রয়োজন। পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে পদে আসীন হবেন কিন্তু পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হবেন না। ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি না হওয়ার কারণে একই ক্যাডারেও চলছে সীমাহীন বিশৃঙ্খলা। যেমন শিক্ষা ক্যাডারের ২৪তম বিসিএস উদ্ভিদবিজ্ঞানের সব কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়নি। কিন্তু ইংরেজি বিভাগের কর্মরত ২৪, ২৫ এবং ২৬তম বিসিএস কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উদ্ভিদবিজ্ঞানের ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা সিনিয়র, নাকি পরের ২৬ ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের কর্মকর্তা সিনিয়র? একই প্রতিষ্ঠানে কে কাকে স্যার সম্বোধন করবেন আর কে কাকে সাহেব সম্বোধন করবেন? শিক্ষা ক্যাডারের বিশৃঙ্খলার সামান্য উদাহরণ এটি। সামগ্রিক পরিস্থিতি আরও ভয়ানক। সহযোগী অধ্যাপক উপাধ্যক্ষের অধীনে থাকেন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উপজেলায় যে প্রকৌশলী-চিকিৎসক-কৃষি কর্মকর্তা থাকেন, তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অধীনে থাকেন। প্রশাসন ক্যাডারের একজন তরুণ কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হন। অন্যদিকে সেই নির্বাহী কর্মকর্তার চেয়ে অনেক সিনিয়র এবং তাঁর চেয়ে মেধায় ও যোগ্যতায় অনেক বেশি থাকা সত্ত্বেও একজন চিকিৎসক-কৃষিবিদ-প্রকৌশলী পদোন্নতি না পেয়ে প্রবেশ পদেই হয়তো থাকেন। জেলা পর্যায়েও একই অবস্থা। এতে করে প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করাটা সম্মানজনক হয় না। এ অবস্থার অবসান না হলে আন্তক্যাডার বৈষম্য দূর হবে না।
সব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের চাকরিজনিত যেকোনো সিদ্ধান্তের জন্য যেতে হয় সচিবালয়ে। সেখানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সব ক্যাডারের ছোট-বড় সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। এতে করে সব ক্যাডারের যে প্রধান কর্মকর্তা মহাপরিচালকেরা রয়েছেন, তাঁদের ক্ষমতাকে ছোট করা হয়। সব মন্ত্রণালয়ের সচিব হওয়া প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তার। যেমন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব হবেন একজন কৃষিবিদ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হবেন একজন চিকিৎসক। এতে করে সরকারি চাকরির কাজে যেমন গতিশীলতা আসবে, তেমনি স্বাধীনভাবে সব ক্যাডার নিজ নিজ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন।
একই পরীক্ষা দিয়ে যাঁরা একই ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা হচ্ছেন, তাঁদের প্রতি রাষ্ট্রীয় সুবিচার হচ্ছে তাঁদের চাকরিতে যোগ্যতাভিত্তিক সমান সুবিধা নিশ্চিত করা। বিসিএস ক্যাডারদের বিশৃঙ্খলা দূর করতে পদোন্নতিবৈষম্য আশু দূর করা প্রয়োজন।
তুহিন ওয়াদুদ
শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।
wadudtuhin@gmail.com
এ ক্যাডারগুলোর মধ্যে কোনো কোনো ক্যাডার অত্যন্ত লোভনীয়। যেমন কোনো কোনো ক্যাডার রয়েছে যেগুলোতে বিত্তের পাহাড় গড়ে তোলা যায়, কেউ কেউ সেগুলো পছন্দ করেন, কেউ কেউ পছন্দ করেন ক্ষমতার দাপট, কেউ কেউ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার কারণে অপছন্দের ক্যাডার নেন। বিসিএস পরীক্ষায় সাধারণত পছন্দের প্রথম তালিকায় থাকে পররাষ্ট্র, দ্বিতীয়ত প্রশাসন, তৃতীয়ত পুলিশ। পছন্দের তালিকায় এ ক্রম ঠিক না থাকলেও এ তিনটির মধ্যেই সাধারণত প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় থাকে। এরপর আর ঠিক থাকে না।
পছন্দক্রম নিচের দিকে ক্রমাগত নামতে নামতে শিক্ষা ক্যাডার পর্যন্ত চলে আসে। তবে সংখ্যায় কম হলেও অনেকেই আছেন যাঁরা শিক্ষকতা ছাড়া অন্য কোনো ক্যাডার পছন্দ করেন না। এর বাইরে যাঁরা প্রকৌশলী, চিকিৎসক কিংবা কৃষিবিদ রয়েছেন তাঁরা সাধারণত টেকনিক্যাল ক্যাডারেই থাকেন। যাঁরা প্রকৌশলী, চিকিৎসক, কৃষিবিদ হন তাঁরা তুলনামূলক অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের চেয়ে বেশি মেধাবী। তবে কর্মক্ষেত্রে এই মেধাবীরা তুলনামূলক উপেক্ষিত। তার মধ্যে স্বাস্থ্য ক্যাডারের চেয়ে কর্মক্ষেত্রে অবহেলিত অবস্থা আর কোনোটিতেই নেই। বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের বিচারিক ক্ষমতা না থাকলেও তারা ব্রাহ্মণ অবস্থা থেকে সরে আসেনি।
ক্যাডারভিত্তিক বৈষম্যের নানা ধরন রয়েছে। যেমন ধরা যাক কোনো এক বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সব ক্যাডারের সব শাখায় কর্মকর্তা নিয়োগ হলো। একই দিনে পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলো, আবার একই দিনে তাঁদের যোগদান হলো। তাঁরা যদি তাঁদের পদোন্নতির শর্ত পূরণ করেন, তাহলে তাঁদের একই দিনে পদোন্নতি হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তা হচ্ছে না। পদোন্নতির ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা জটিলতা। যেমন স্বাস্থ্য ক্যাডারের পদোন্নতির জন্য তাঁদের অতিরিক্ত ডিগ্রি থাকা চাই। একই যোগ্যতা কিংবা চিকিৎসকদের চেয়ে কম যোগ্যতা নিয়ে পদোন্নতি পেয়ে হয়তো কেউ ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদে আসীন হচ্ছেন, আর চিকিৎসকদের হয়তো প্রবেশ পদেই সারা জীবন থাকতে হচ্ছে। শিক্ষা ক্যাডারসহ অনেক ক্যাডারের জন্য শুধু বিভাগীয় পরীক্ষা, বনিয়াদি কোর্স সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই পদোন্নতি হয়। প্রশাসন ক্যাডার, পুলিশ ক্যাডারসহ কিছু কিছু ক্যাডারের কিছুদিন বেশি প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হয়। সব ক্যাডারের জন্য যদি আর কোনো উচ্চতর ডিগ্রির প্রয়োজন না হয়, তাহলে স্বাস্থ্য ক্যাডারের জন্য কী কারণে অতিরিক্ত ডিগ্রির প্রয়োজন হবে? বিসিএস পরীক্ষার সময় যে যোগ্যতার ভিত্তিতে পরীক্ষা হয়, তাতে চিকিৎসা ক্যাডারের অনেকেই অন্য অনেক ক্যাডারের চেয়ে বেশি দিনের শিক্ষাজীবন নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। তার পরও তাঁদের পদোন্নতি পাওয়ার সময় আরও বেশি ডিগ্রি চেয়ে তাঁদের প্রতি অবহেলা প্রকাশ করা হয়েছে। চিকিৎসকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে উচ্চতর ডিগ্রিকে অধিক যোগ্যতা হিসেবে ধরে নিয়ে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তার সমান অথবা অধিক যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা ক্যাডারদের পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, যা হওয়া উচিত নয়। ২৮টি ক্যাডারের মধ্যে স্বাস্থ্য ক্যাডার একমাত্র ক্যাডার, যেখানে প্রবেশকালীন যোগ্যতার চেয়ে আরও অনেক বেশি ডিগ্রি প্রয়োজন হয় পদোন্নতিতে। অন্য সব ক্যাডারে প্রবেশকালীন যোগ্যতাই তাঁকে সর্বোচ্চ পদে আসীন করার জন্য যথেষ্ট।
ক্যাডারগুলোতে পদ শূন্য সাপেক্ষে পদোন্নতি হয়। দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পদ না থাকলেও স্বীয় পদেই ভাসমান পদোন্নতি দেওয়ার বিধান আছে। প্রয়োজনে ক্যাডার সার্ভিসে সেই বিধান কার্যকর করা যেতে পারে। শুধু নির্দিষ্ট ক্যাডার ধরে নয়, যখন পদোন্নতি হবে তখন সেই বিসিএসের সব কর্মকর্তার পদোন্নতি হওয়া প্রয়োজন। পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে পদে আসীন হবেন কিন্তু পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হবেন না। ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি না হওয়ার কারণে একই ক্যাডারেও চলছে সীমাহীন বিশৃঙ্খলা। যেমন শিক্ষা ক্যাডারের ২৪তম বিসিএস উদ্ভিদবিজ্ঞানের সব কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়নি। কিন্তু ইংরেজি বিভাগের কর্মরত ২৪, ২৫ এবং ২৬তম বিসিএস কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উদ্ভিদবিজ্ঞানের ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা সিনিয়র, নাকি পরের ২৬ ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের কর্মকর্তা সিনিয়র? একই প্রতিষ্ঠানে কে কাকে স্যার সম্বোধন করবেন আর কে কাকে সাহেব সম্বোধন করবেন? শিক্ষা ক্যাডারের বিশৃঙ্খলার সামান্য উদাহরণ এটি। সামগ্রিক পরিস্থিতি আরও ভয়ানক। সহযোগী অধ্যাপক উপাধ্যক্ষের অধীনে থাকেন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উপজেলায় যে প্রকৌশলী-চিকিৎসক-কৃষি কর্মকর্তা থাকেন, তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অধীনে থাকেন। প্রশাসন ক্যাডারের একজন তরুণ কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হন। অন্যদিকে সেই নির্বাহী কর্মকর্তার চেয়ে অনেক সিনিয়র এবং তাঁর চেয়ে মেধায় ও যোগ্যতায় অনেক বেশি থাকা সত্ত্বেও একজন চিকিৎসক-কৃষিবিদ-প্রকৌশলী পদোন্নতি না পেয়ে প্রবেশ পদেই হয়তো থাকেন। জেলা পর্যায়েও একই অবস্থা। এতে করে প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করাটা সম্মানজনক হয় না। এ অবস্থার অবসান না হলে আন্তক্যাডার বৈষম্য দূর হবে না।
সব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের চাকরিজনিত যেকোনো সিদ্ধান্তের জন্য যেতে হয় সচিবালয়ে। সেখানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সব ক্যাডারের ছোট-বড় সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। এতে করে সব ক্যাডারের যে প্রধান কর্মকর্তা মহাপরিচালকেরা রয়েছেন, তাঁদের ক্ষমতাকে ছোট করা হয়। সব মন্ত্রণালয়ের সচিব হওয়া প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তার। যেমন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব হবেন একজন কৃষিবিদ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হবেন একজন চিকিৎসক। এতে করে সরকারি চাকরির কাজে যেমন গতিশীলতা আসবে, তেমনি স্বাধীনভাবে সব ক্যাডার নিজ নিজ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন।
একই পরীক্ষা দিয়ে যাঁরা একই ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা হচ্ছেন, তাঁদের প্রতি রাষ্ট্রীয় সুবিচার হচ্ছে তাঁদের চাকরিতে যোগ্যতাভিত্তিক সমান সুবিধা নিশ্চিত করা। বিসিএস ক্যাডারদের বিশৃঙ্খলা দূর করতে পদোন্নতিবৈষম্য আশু দূর করা প্রয়োজন।
তুহিন ওয়াদুদ
শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।
wadudtuhin@gmail.com