নির্বাচিত ব্লগ

বর্গী মানে কি? কাদের কে বর্গী বলে ডাকা হতো?

বাংলায় বর্গী আক্রমণের সেই কবিতার পুরোটা কতজন জানেন? ছেলে ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো বর্গী এল দেশে বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কিসে।। ধান ফুর...

আমি ব্যাক্তিগতভাবে ডাক্তারদের অপছন্দ করি। ভয়ংকর অপছন্দ!




আমি ব্যাক্তিগতভাবে ডাক্তারদের অপছন্দ করি। ভয়ংকর অপছন্দ!
অপছন্দের নানান কারণ আছে, এদের ব্যবহার খারাপ, এরা পাংকচুয়াল না, এরা বিনয়ী না, এরা দক্ষ না। সবচেয়ে বড় কথা এরা আমার চেয়ে বেশি বোঝে। শুধু আমার চেয়ে না, এরা জাতীর বিবেক, সৎ ও নিষ্ঠাবান পেশার পরাকাষ্ঠা সাংবাদিকদের চেয়েও বেশি বোঝে। কী ধৃষ্টতা! কী ধৃষ্টতা!!
ডাক্তাররা বুঝবে জগতে সবচেয়ে কম, এদের রাগ থাকবে না, এদের ক্ষোভ থাকবে না, কষ্ট থাকবে না, এদের জন্ম, সৃষ্টি মানুষের জন্য, এরা এদের আহার, নিদ্রা, আনন্দ, বেদনা সকলই মানুষের তরে উৎসর্গ করবে, তবেই না এরা ডাক্তার! এরা ৫ বছরের এমবিবিএস শেষ করে ইন্টার্নি করবে, সেই ইন্টার্নিতে চোখ মুখ নাক বুঝে গাধার মত খাটবে, খাটুনি শেষে মাসে দশ হাজার টাকা পাবে, দশ হাজার! দশ হাজার দশ হাজার! কত্ত টাকা! এক হাজার টাকার দশখানা নোট! পাঁচশ টাকার কুড়িখানা নোট, আর একটাকার? একটাকার দশ হাজারখানা নোট? আহা, গুনতে গেলি পরে অদ্ধেক বেলা লাগি যাবে নে!

এরপর? পাঁচ বছরের অনার্স মাস্টার্স শেষে ‘মানুষেরা’ চাকরি করেন, মাস শেষে বেতন পান, বেতনের প্রথম টাকায় বাবা-মা’র জন্য দামী শাড়ী, দামী জুতো, ডিজাইন করা পানের বাটা, সুন্দর ফ্রেমের চশমা, বাহারী জায়নামাজ, তজবী কিনে এনে বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মা-বাবা এমন সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে শোকর আদায় করেন, আহা, বাপধন, মা জননী!
আর ওই এক বছর অবধি ইন্টার্নিতে মাসে দশ হাজার টাকা পাওয়া ডাক্তাররা ইন্টার্নি শেষে হাতের আঙ্গুলে কড় গুনে হিসেব করতে আবিস্কার করবে ওই ‘মানুষদের’ মতন তারও পাঁচ বছরের পড়াশোনা শেষ! না, না, ৫ বছর না, শুধু, ইন্টার্নসহ ৬ বছরের পড়াশোনা শেষ, কিন্তু... কিন্তু তার জন্য কোন চাকরি নাই, টাকা নাই, মা বাবার জন্য শাড়ী-লুঙ্গি, জামা-জুতো, পানের বাটা তজবি জায়নামাজ কেনার পয়সা নেই! পয়সা কোথায় থাকবে, কিভাবে থাকবে? ৬ বছরের হাড়ভাঙ্গা খাটুনীর পর সে একখানা এমবিবিএস ডিগ্রী নিয়ে আবিস্কার করল সে আসলে বেকার! এমবিবিএস- মা বাপের বেকার সন্তান!!
তাহলে উপায়? উপায় আর কি? 'মানুষে'রা যখন ৫ বছরের অনার্স মাস্টারস শেষে এতদিন ধরে বাবা মায়ের করা কষ্টলাঘবে ব্রতী হন, ডাক্তাররা তখন সেই বাবা মায়ের সামনে বিব্রত, ভীত, ন্যুজ ভঙ্গীতে দাঁড়ান, দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা মিনমিনে গলায় বলেন, ‘কোচিং এ ভর্তি হব, টাকা লাগবে!’
জ্বি, কোচিং এ ভর্তি হতে টাকা লাগবে! এদের পাঁচবছর শেষে পড়াশোনা শুরু। ভয়াবহ কঠিন সব পরীক্ষা, এই পরীক্ষা, সেই পরীক্ষা দিয়ে, তাতে তুমুল প্রতিদ্বন্ধিতা করে এদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের অধীনে কাজ করার জন্য নিজেকে যোগ্য হিসেবে প্রমাণ করতে হবে, বিভিন্ন হাসপাতালে হাসপাতালে ‘চাকর-বাকরের’ মত কাজ করতে হবে, পান থেকে চুন খসলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুনতে হবে, এবং হ্যা, এ সকলি করতে হবে বিনা পারিশ্রমিকে, কারণ ইনারা ডাক্তার, কারণ ইনারা অনারারী ডাক্তার, আসলে অনারারী না, ইনারা অনাহারী ডাক্তার! তখন ইনাদের অবস্থা অবশ্যই অনাহারীদের চেয়ে বেটার কিছু না। এনাদের মা-বাবারা ততদিনে বয়সের ভারে ন্যুজ, ক্লান্ত, টাকা পয়সা দিতে দিতে নিঃস্ব, ইনাদের এখনও মাসে মাসে হাত খরচের পয়সা দিতে হয়, বই খাতা, কাপড়, চুলের তেল, পায়ের জুতো, দুপুরে বাইরে একবেলা ভাত খাবার পরিবর্তে দুটা সিঙ্গারা আর এক কাপ চা খাবার পয়সা দিতে হয়। এবং হা ইনারাই কিন্তু এমবিবিএস পাশ করা ডাক্তার! জ্ব্বি জনাব! কথা সত্য!
বাংলায় প্রবাদ আছে, ‘আশায় থাকো কাউয়া, পাকলে খেও ডেউয়া’। ভালো প্রবাদ। অতি ভালো। ডাক্তারাও আশায় থাকেন, কবে উনারা ডাক্তার হবেন! হ্যা, ডাক্তারদের ডাক্তার হয়ে উঠতে হবে! ভালো, ডাক্তার, নামকরা ডাক্তার, বড় ডিগ্রীধারী ডাক্তার, স্পেশালিষ্ট ডাক্তার! না হলে আপনি আমি তাদের পুঁছব না। নাক-ভ্রু-গাল কুচকে বল, 'অ, এই ডাক্তর?'
উনাদের মধ্যে সকলে সেই ডাক্তার হয়ে উঠতে পারেন না, কেউ কেউ পারেন। মেয়েদের জন্য অবস্থা আরও ভয়াবহ, এই দেশে কুড়ি, পঁচিশের পর মেয়েদের বিয়ে হওয়া ঝক্কির ব্যাপার, মেয়ের বয়স হয়ে গেছে, আইবুড়ো মেয়ে, মেয়ের নিশ্চয়ই কোন ব্যাপার আছে, সমস্যা কি?
তাহলে? তাহলে আর কি? মেডিকেলে পড়া ডাক্তার মেয়ের বাজার ভালো! বয়সেও কচি, কুড়ি বাইশ বছর বয়স। তাছাড়া পাত্র, পাত্রের মা-বাবা বড় গলা করে বলতে পারবেন, ‘আমার বউমা ডাক্তার! আহা, গালভরা আনন্দ, গর্ব, তৃপ্তি!’ সেই তৃপ্তি আরও বাড়াতে বিয়ের সাথে সাথে ডাক্তার বউকে দিয়ে হেঁশেল না ঠেলাতে পারলে আনন্দটা যেন জমে না। আড়চোখে রান্না ঘরে ডাক্তার বউকে রাঁধতে দেখা, আহা, কী আনন্দ আকাশে বাতাসে! দুদিন বাদে, কী ব্যাপার, বাচ্চা কাচ্চা হইব না বউয়ের?’ বউয়ের বাচ্চাও হতে হল, বাচ্চার বড়ও হতে হবে, তাহলে? ডাক্তার? ডাক্তার বউ?
আর সেই 'ডাক্তার' মেয়ের মা বাবার ফোঁটা ফোঁটা ঘামের নিঃশেষ, বিন্দু বিন্দু স্বপ্নের ফসল?
ডাক্তার মেয়ে! কই সে? মা বাবার স্বপ্ন, রোজ রাত দিনের একটু একটু স্বপ্ন, সেই স্বপ্নদের জন্য কতদিন বাবা রিকশার ১০ টাকা বাঁচাতে বাসের ভিড়ে গাদাগাদি করে অফিসে গেছেন, ঈদের সময় আগের ঈদের পাঞ্জাবী পড়েছেন, পুরনো চশমার ফ্রেমটা ভেঙ্গে গেলেও বদলান নি, সুতো দিয়ে বেঁধে নিয়েছেন। মা তার ছেড়া ব্লাউজ শাড়ির আচলে ঢেকে রেখেছেন, ছেড়া স্যান্ডেল সপ্তাহান্তে মুচির দোকানে গিয়েছে! মেয়েটা এইতো ডাক্তার হল বলে, আরতো কটা বছর! তারপর! তারপর সব কষ্ট ঘুচবে! সেই মেয়ে! সেই মেয়ে! এখন হেঁশেল ঠেলে, বাচ্চা সামলায়, গভীর রাতে স্বামীর পাশে শুয়ে একা একা কাঁদে। তবে কান্না রেখে ঘুমতে হবে এখুনি, সকালে স্বামী অফিসে যাবে, তার নাস্তা করতে হবে, বাবুর কাঁথা পাল্টাতে হবে, শ্বাসুরীর জন্য আলাদা নাস্তা করতে হবে, তিনি আবার অন্যদের মত রুটি ভাজি খান না, তার চাই ভাত, ভাত... সাথে চিংড়ির বড়া হলে ভালো হয়। ডাক্তার বউয়ের হাতের চিংড়ির বড়া! আহা, সে কি স্বোয়াদ!
ডাক্তারদের আমার ভীষণ অপছন্দ! এরপর চল্লিশ পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে ওদের কেউ কেউ ডাক্তার হয়, মাস শেষে কিছু কাগজের নোটের দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু সেগুলো তখন শ্রেফ কাগজের নোটই থাকে। তখন বন্ধুদের নিয়ে গলা ফাটিয়ে কফিশপে উল্লাস করতে ইচ্ছে হয় না, সিনেমা হলে সবচেয়ে দামী সিটে বসে তীব্র উত্তেজনা নিয়ে সিনেমা দেখতে ইচ্ছে হয় না, রিকশায় প্রিয় মানুষটার হাত ধরে খোলা আকাশের নিচে প্রজাপতির মত ঘুরতে ইচ্ছে হয় না, এমনকি রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিলবোর্ডের দুর্দান্ত সব মডেলদের শরীরে ঝা চকচকে পোশাক দেখে একদিন যে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এসেছিল শুন্য পকেট, কঠিন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে, বাবা মা’র ক্লান্ত চোখের কথা ভেবে, আজ পকেট ভর্তি টাকা নিয়েও হঠাৎ আবিস্কার হয়, সেই ইচ্ছেটা আর নেই! শুধুই কি ইচ্ছে? সময়টাইতো নেই! সময়! সময়! সময়!
বয়স? হা, সেই উচ্ছ্বাসের সময় আর নেই, বয়স আর নেই! কী হবে পকেটভর্তি এই কাগুজে নোট দিয়ে!হা, শ্রেফ কাগুজে নোট, সেই সময় , সেই উচ্ছ্বাস, সেই তেষ্টা, সেই চাপা আনন্দ, অপেক্ষা ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা এর নেই। নেই! একটা জীবন, একটাইতো জীবন! এই জীবনের সময় ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই, কারো নেই!
এই একজন ডাক্তার!
আমার তারপরও ডাক্তারদের অপছন্দ, কারণ এরা আমাদের দেশের রাজনইতিক নেতাদের চিনতে পারে না, এরা দলীয় ক্যাডারদের অপারেশন থিয়েটারে ঢুকতে দিতে চায় না, এরা ডাক্তার, এরা মানুষ না, এরা শ্রেফ ডাক্তার, ডাক্তার, এরা সেটা কখনও কখনও ভুলে যায়। ভুলে গিয়ে এরাও কখনও কখনও মানুষের মতই রেগে ওঠে, ক্ষুদ্ধ হয়, চেঁচায়। কিন্তু এরা জানে না, এরা ডাক্তার, এরা মানুষ না। মানুষদের অনুভূতি এদের থাকতে নেই! এদের রাগতে নেই, কাঁদতে নেই, ভুল করতে নেই, কষ্ট পেতে নেই...
এদের পান থেকে চুন খসলে কল্লা চাই স্লোগান ওঠে, অথচ, কদিন আগে মায়ের পেটে গুলি খাওয়া শিশুটিকে কি অসম্ভব অবিশ্বাস্য দক্ষতায় যেই ডাক্তাররা প্রসব করালেন, বাঁচিয়ে রাখলেন মা আর মেয়ে দুজনকেই, কই, সেই ডাক্তারদের নিয়েতো কোথাও টুঁ শব্দটিও ওঠে না, কই বিবেকের পরাকাষ্ঠা সাংবাদিকরা? কই?' হে হে হে, আর ব্বাপ, এতো উত্তেজনার কি আছে? এইটাতো ডাক্তারগোই কাজ, তুমি ডাক্তার, তুমি রোগী বাচাইবা তোমার কাজ তুমি করবা, তাতে আবার এতো ফুটানি কিসের?
আসলেইতো, আমরা আর সকল পেশার মানুষেরা আমাদের সকল কাজ শতভাগ সততায়, দক্ষতায়, দায়বদ্ধতায় করি, এতটুকু অনিয়ম, অদক্ষতা, অবহেলা কস্মিনকালেও হয় নি। সাংবাদিকরা কখনও নিজের টেবিলে বসে দুদিন পরের কোন ঘটনার নিউজ করে না, ঘুষ খায় না, নিউজের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে না, ইয়ালো জারনালিজম করে না, এরা দুধে ধোয়া তুলসি পাতা, এরা জাতির বিবেক, আর ভুলচুক ধরা পরলে, ও হতেই পারেই, মানুষতো! চলেন একটা সংশোধনী দিয়ে সরি বলি, সরি গাইজ, আমি সাংবাদিক, আমি মানুষ! একটু ভুলতো হইতেই পারে, কি বলেন!
উকিল, মোক্তার, জজ, ব্যারিস্টার থেকে শুরু করে বাসের হেল্পার, ইটভাটা শ্রমিক পর্যন্ত ভুল করতে পারবে, কারণ তারা মানুষ! ভুল করতে পারবে না এক ডাক্তার, করলেই মিছিল মিটিং কল্লা চাই, বরখাস্ত চাই, কারণ কি? কারণ সে মানুষ না, সে ডাক্তার?
ডাক্তারদের সম্পর্কে অভিজ্ঞতা খারাপ, তারা কসাই, তারা মৃত লাশ জীবিত বানিয়ে, নিজের ইচ্ছে মতো ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অকারণে রোগী পাঠায়, টেস্ট না লাগলেও পাঠায়, লাগ্লে দুইটা এক্সট্রা দিয়ে পাঠায়, কত কত অভিযোগ! এই সকল কারণে ডাক্তারদের আমার অপছন্দ, শুধু ডাক্তারদেরই, কারণ জগতের আর সকল প্রফেশনালসরা দুগ্ধসম শুভ্র, পুস্পসম সুরভিত।
উকিল, জাজ, ব্যংকার, অফিসের বড় স্যার, কাস্টমসের অফিসার, সাংবাদিক, পুলিশ, খেলোয়াড়, নায়ক, গায়ক, লেখক, সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী এসকল আর সকলের ব্যাপারেই পুস্পসুঘ্রাণসুলভ সুরভিত সুবাসিত অভিজ্ঞতা আছে, এনারা কোনদিন এতটুক খারাপ ব্যবহার করে নাই, কোনদিন অন্যায় করে না, অসৎ হয় না, ডাক্তার ছাড়া বাদবাকী সকল প্রফেশনেই এঞ্জেলরা থাকে, মহামানবেরা থাকেন, কেবল ডাক্তারি প্রফেশনেই কসাই থাকে! এই কারণে আমি ডাক্তারদের অপছন্দ করি, ডাক্তার হচ্ছে ভাতের মতন, হাড়ির সব ভাত টেপা লাগে না, একটা টিপলেই সব ভাতের অবস্থা বোঝা যায়, সুতরাং খারাপ ব্যবহার করা একটা ডাক্তার টিপলেই, দেখলেই আমি সব ডাক্তার খারাপ এইটা বুঝে যাই।
ডাক্তারি প্রফেশনে সকলেই খারাপ, সকলেই, যদিও আমি জানি না, ন্যুনতম এমবিবিএস উত্তীর্ণ মোট ডাক্তারদের সংখ্যা এই দেশে কত? তাদের কজনের আচরণ আমি দেখেছি? সেটা বিষয় না, বিষয় হল, ওই যে ভাত একটা টিপেছি, সব বুঝে গেছি, সব ডাক্তার খারাপ... সব, এই জন্য আমি ডাক্তার অপছন্দ করি, এরা খারাপ, সবাই এক... সবাই এক হাড়ির ভাত...
আমার ডাক্তারদের অপছন্দ, কারণ এরপরও একজন মুমূর্ষু রোগী বাঁচাতে সে তার সবটুকু দিয়ে লড়ে, রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটায়, বাসরঘরে মাঝরাতে বড় খালার, বড় চাচার জরুরীর ফোন পেয়ে ছুটে যায়, এই কারণে আমি ডাক্তারদের অপছন্দ করি, আমরা সকলেই করি।
আমি ডাক্তারদের অপছন্দ করি, বাংলাদেশের মতন একটা দেশে তারা এখনও ডাক্তারি পড়ে, ডাক্তারি করে, মানুষের সেবা দেয়। সালমা ইসলামের মতন একজন এমপির বিরুদ্ধে তারা একযোগে রুখে দাড়াতে পারে না। তারা বুঝিয়ে দিতে পারে না, একদিন, মাত্র একটি দিন তারা চুপ হয়ে গেলে, এই এমপিদের কি হবে? এই মন্ত্রীদের কি হবে, এই দেশের ষোল কোটি মানুষের কি হবে? তারা সেটা বুঝিয়ে দিতে পারে না।
কারণ তারা মানুষ না, কারণ তারা ডাক্তার। আমার মত মানুষ হলে তারা ওই সালমা ইসলামের নোংরা ক্ষমতা, তার পত্রিকার সাংবাদিকদের নিকৃষ্ট সাংবাদিকতার, একজন ডাক্তারের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ভয়াবহ নোংরা, সস্তা, আপত্তিকর সাংবাদিকতার প্রতিবাদে জ্বালাও পোড়ায়ে মেতে উঠত, একযোগে কাজ বন্ধ করে দিত, হাজার হাজার মানুষ মরত বিনা চিকিৎসায়, আর আমি তখন রাজনীতিবিদদের মতন গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে চোখ বাকা করে হাসতাম, ‘এইবার বুঝছ ঠ্যালা? আমি কেডা বুঝছনি?’
এই দেশের সকল সাংবাদিক একদিন না, একমাস কাজ বন্ধ রাখলে এই দেশের, এই দেশের মানুষের কি ক্ষতি হবে জানি না, একদিন এমপি মন্ত্রীরা কাজ বন্ধ রাখলে কি এমন ক্ষতি হবে তাও জানি না, কিন্তু এই ডাক্তাররা সারা দেশে যদি একটা ঘণ্টাও কাজ বন্ধ রাখে, তাহলে কি হবে, সেইটা কিন্তু আমরা মানুষেরা জানি, তারপরও আমরা জানি, ডাক্তাররা মানুষ না, তারা ডাক্তার, আর ডাক্তার বলেই এই ভয়ংকর কাজটি তারা করবেন না, কিন্তু যদি করেন? কোন একদিন, যদি করে ফেলেন? কি হবে তখন? আমরা মানুষ বলেই তা ভাবি না, কিন্তু ওই ডাক্তাররা কিন্তু ভাবেন, হ্যা তারা ভাবেন, আর ভাবেন বলেই এইসব এম্পি, মন্ত্রীরা ধীরে ধীরে গায়ে চরে বসেন, কারণ তারা জানেন, তারা যতটা নৃশংস হতে পারেন, এই ডাক্তাররা তা পারেন না...
আমি ডাক্তারদের অপছন্দ করি, কারণ তারা এটা করে নি, করতে পারে নি। কারণ তারা আমার মত নোংরা মানুষ হয়ে উঠতে পারে নি। কারণ তারা এই দেশের অকৃতজ্ঞ মানুষের চেয়ে সহস্রগুণ উৎকৃষ্ট হয়েও এই ঘৃণ্য মানুষদের জন্য নিজেদের অমূল্য জীবন অবলীলায় নিঃশেষ করে দিচ্ছে।
আমি হিংসায়, ক্রোধে, ঈর্ষা আর প্রবল হীনমন্যতায় ডাক্তারদের অপছন্দ করি। কারণ আমি তাদের মত হয়ে উঠতে পারি নি... কারণ আমি এখনও ""এই দেশের মানুষ"" রয়ে গেছি!!
- সাদাত

০৮/০১/২০১৫



Jahagirnagar University



Share:

আর্কাইভ

সর্বশেষ ব্লগ

মেডিকেল কলেজ

ডাউনলোড

সকল