আবারও প্যারাসিটামল-বিপত্তি দেখা দিয়েছে দেশে। এ দফায় আগের মতো কারো তাৎক্ষণিক মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও দীর্ঘমেয়াদি বড় ক্ষতির আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। চার বছর আগে সরকারের অনুমোদন নিয়েই দেশের ১৬টি ওষুধ কম্পানি উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছিল প্যারাসিটামল ৫০০ মিলিগ্রাম + ডিএল মেথিওনিন ১০০ মিলিগ্রাম কম্বিনেশন জেনেরিকের ট্যাবলেট। প্রতিটি কম্পানি যার যার আলাদা ব্র্যান্ড নামে এ ওষুধ বাজারে ছাড়ে। তবে গত ৭ জুলাই সরকারের জাতীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটির ২৪৪তম সভায় ওষুধটির অনুমোদন বাতিল করা হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বাতিল করার পরে এখনো ওই ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে দোকানে দোকানে। ওষুধ কম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই ওষুধটি বাতিল ও বাজার থেকে তা প্রত্যাহারের জন্য কেউ কেউ দু-এক দিন আগে নোটিশ পেয়েছে। তাই এটি কার্যকর করতে কিছুটা সময় লাগছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমাদের ভাগ্য ভালো যে বিশেষজ্ঞ কমিটি এ ওষুধটির ক্ষতিকর দিক ধরতে পেরেছে এবং দ্রুত তা বাতিল করতে সক্ষম হয়েছে। তা না হলে তিন-চার বছর ধরে এই ওষুধের মাধ্যমে যতটা ক্ষতি হয়েছে, এর মাত্রা আরো বাড়তে থাকত।'
জাতীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটির ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রোভিসি অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহম্মেদ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'সভায় ওই ওষুধটি বাতিলের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এর আগে টেকনিক্যাল সাবকমিটির সুপারিশের ওপর আমরা গুরুত্ব দিই। সব কিছু জেনেশুনে আমরা সর্বসম্মতভাবে ওষুধটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিই।'
জানতে চাইলে ওই চিকিৎসক বলেন, 'আমার কাছে মনে হচ্ছে, এ ওষুধটির অনুমোদন দেওয়ার সময় পর্যাপ্ত যাচাই-বাছাই, বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়নি। ফলে গত চার বছরে যারা এ ওষুধ সেবন করেছে, তাদের কিছু না কিছু ক্ষতির আশঙ্কা তো থাকছেই।'
সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রুহুল আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যখন ওষুধটির অনুমোদন দেওয়া হয় তখন এটির অপকারের চেয়ে উপকারের মাত্রা বেশি বলেই বিবেচনায় নিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। পরে এ নিয়ে আরো আলোচনা ও পর্যালোচনার পর, উন্নত বিশ্বের আরো অধিকতর তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে দেখা গেছে, এটিতে আসলে নানাবিধ ঝুঁকি আছে। ফলে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতেই আবার এটা বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই ওষুধটি বাজার থেকে প্রত্যাহারের জন্য আমরা ইতিমধ্যেই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়েছি।'
ওই কর্মকর্তা বলেন, 'সারা বিশ্বেই অনেক ওষুধ যেমন অনুমোদন দেওয়া হয়, আবার ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হওয়ার পর তা বাতিলও করা হয়। আমরাও তাই করি। এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে বাইরের দেশের ওপর নির্ভর করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারণ এ দেশের সব ওষুধই আবিষ্কার হয় বাইরে। আর এখানে বৈজ্ঞানিকভাবে কোনো ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দেওয়ার মতো ক্ষমতাও আমাদের নেই।'
ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটির ২৪৪তম সভায় বলা হয়, প্যারাসিটামল ৫০০ মিলিগ্রাম + ডিএল মেথিওনিন ১০০ মিলিগ্রাম কম্বিনেশন পদটিতে মেথিওনিনের (গবঃযরড়হরহব) পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও ঝুঁকির বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য টেকনিক্যাল সাবকমিটির সভায় উপস্থাপিত হলে সদস্যরা বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা করেন। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটির ২৪০তম সভায় বিএনএফ-৬১ রেফারেন্সের ভিত্তিতে ওই ওষুধটি অনুমোদিত হলেও বর্তমানে বিএনএফ ৬৯-এ তা অন্তর্ভুক্ত নেই। এ ছাড়া এ পদটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) এবং ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা পণ্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (এমএইচআর) কর্তৃক অনুমোদিত নয়। এ ছাড়া ওই কম্বিনেশন পদটিতে মেথিওনিনের উপস্থিতির কারণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে হৃদরোগ, ক্যান্সার, হেপটিক এসেফালোপ্যাথি, ব্রেন ড্যামেজ, এসিডোসিসের ঝুঁকি থাকায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এটি প্রত্যাহার করে নেয় ব্রিটিশ উদ্ভাবক কম্পানিটি। তা ছাড়া ১২ বছরের নিচের কোনো শিশুর জন্য মেথিওনিন সুপারিশকৃত না থাকায় এটি অবাধে ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে বিস্তারিত আলোচনা পর্যালোচনার ভিত্তিতে ওই ওষুধটি সর্বসম্মতক্রমে বাতিল করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা জানান, সাধারণ জ্বর বা ব্যথানাশক হিসেবে প্যারাসিটামল জেনেরিকের ওষুধের জুরি নেই। এসেনশিয়াল ড্রাগ ক্যাটাগরির এ ওষুধ পাওয়া যায় হাতের নাগালে। এমনকি জরুরি প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নিজের উপসর্গ বুঝে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় এ ওষুধ সেবন করতেও খুব একটা বাধা নেই। আর এই প্যারাসিটামলের কার্যকারিতাকে আরো দ্রুততর করতে এর সঙ্গে আরো কিছু যৌগ যুক্ত করা হয় অনেক ক্ষেত্রেই। ওষুধ বিজ্ঞানে এটাও অনুমোদন দেওয়া আছে। তবে বাংলাদেশে এ যুক্ত যৌগের কারণে এর আগে একাধিকবার প্রাণহানির ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। এমনকি এ ধরনের ঘটনায় শাস্তিও হয়েছে আদালতের মাধ্যমে। কিন্তু এবার যে ঘটনাটি ধরা পড়ল তা আরো বেশি বিপজ্জনক। কারণ এটা ইতিমধ্যেই কত মানুষের ক্ষতি করে ফেলেছে তার হিসাব করা দুষ্কর। এ ক্ষেত্রে এ ধরনের ওষুধের ওপর ভালোভাবে গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই ওষুধ কম্পানিগুলোর একেকটি ওষুধ উৎপাদন ও বাজারে নিয়ে আসার প্রবণতাকে দায়ী করছে সবাই। পাশাপাশি সরকারের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটির ওপরও এর দায়ভার বর্তায় বলে জানায় কেউ কেউ। কারণ যুক্তরাজ্যে ১৯৯৭ সালেই প্যারাসিটামলের সঙ্গে মেথিওনিন যৌগের মিশ্রণ বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটি কিভাবে ২০১১ সালে এ ওষুধটির অনুমোদন দিয়েছে তা বোধগম্য নয়।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাতিলকৃত প্যারাসিটামল ৫০০ মিলিগ্রাম + ডিএল মেথিওনিন ১০০ মিলিগ্রাম কম্বিনেশনের ওষুধটি একমি ল্যাবরেটরিজ 'ফাস্ট এম', বায়োফার্মা 'এসিটাসফট', ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল 'ফেভিমেট', এসকেএফ 'টামিপ্রো', ইবনে সিনা 'সফটপারা', লিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস 'মেটাক', নভেলটা বেস্টওয়ে ফার্মাসিউটিক্যালস 'নরসফট', অপসোস্যালাইন 'জিয়াসেট', অপসোনিন ফার্মা 'রেনোমেট', রেনাটা 'প্যারাডট', শরিফ ফার্মাসিউটিক্যালস 'প্যারামিন', সোমাট্যাক ফার্মাসিউটিক্যালস 'একটল এম', স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস 'এসি সফট', বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস 'নাপাসফট' ও জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালস 'পামিক্স এম' নামে বাজারে ছাড়ে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ফার্মেসিতে আগের মতোই এসব ওষুধ পাওয়া যায়। তবে স্কয়ার, বেক্সিমকো, এসকেএফের মতো স্বনামধন্য কম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ইতিমধ্যে তারা বাজার থেকে ওষুধটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
জানতে চাইলে অপসোনিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রউফ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সরকার অনুমোদন দিয়েছে বলেই তো আমরা এ ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করেছি। ওষুধটির মার্কেটিংও বেশ ভালোই ছিল। এখন কেন এটি আবার সরকার বাতিল করল, বুঝতে পারছি না।'
তিনি বলেন, 'আমরা মানুষের জীবন রক্ষার উদ্দেশ্যে ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করে থাকি। তবে কোনো ওষুধ মানুষের বিপদ ডেকে আনুক, তা আমাদের কাম্য নয়। মানুষের ক্ষতি করে আমরা ব্যবসা করতে চাই না। কিন্তু সরকার এ ওষুধ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিলেও মাত্র এক দিন আগে আমরা নোটিশ পেয়েছি। মাত্র সাত দিনের সময় দেওয়া হয়েছে ওষুধটি বাজার থেকে তুলে নষ্ট করে ফেলার জন্য। কিন্তু এত অল্প সময়ে এটা করা কঠিন হয়ে পড়বে। এ ছাড়া আমাদের মতো অন্য কম্পানিগুলোও ওষুধটি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছিল। এখন সবারই বড় রকমের ক্ষতি হয়ে যাবে।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমাদের ভাগ্য ভালো যে বিশেষজ্ঞ কমিটি এ ওষুধটির ক্ষতিকর দিক ধরতে পেরেছে এবং দ্রুত তা বাতিল করতে সক্ষম হয়েছে। তা না হলে তিন-চার বছর ধরে এই ওষুধের মাধ্যমে যতটা ক্ষতি হয়েছে, এর মাত্রা আরো বাড়তে থাকত।'
জাতীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটির ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রোভিসি অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহম্মেদ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'সভায় ওই ওষুধটি বাতিলের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এর আগে টেকনিক্যাল সাবকমিটির সুপারিশের ওপর আমরা গুরুত্ব দিই। সব কিছু জেনেশুনে আমরা সর্বসম্মতভাবে ওষুধটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিই।'
জানতে চাইলে ওই চিকিৎসক বলেন, 'আমার কাছে মনে হচ্ছে, এ ওষুধটির অনুমোদন দেওয়ার সময় পর্যাপ্ত যাচাই-বাছাই, বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়নি। ফলে গত চার বছরে যারা এ ওষুধ সেবন করেছে, তাদের কিছু না কিছু ক্ষতির আশঙ্কা তো থাকছেই।'
সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রুহুল আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যখন ওষুধটির অনুমোদন দেওয়া হয় তখন এটির অপকারের চেয়ে উপকারের মাত্রা বেশি বলেই বিবেচনায় নিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। পরে এ নিয়ে আরো আলোচনা ও পর্যালোচনার পর, উন্নত বিশ্বের আরো অধিকতর তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে দেখা গেছে, এটিতে আসলে নানাবিধ ঝুঁকি আছে। ফলে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতেই আবার এটা বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই ওষুধটি বাজার থেকে প্রত্যাহারের জন্য আমরা ইতিমধ্যেই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়েছি।'
ওই কর্মকর্তা বলেন, 'সারা বিশ্বেই অনেক ওষুধ যেমন অনুমোদন দেওয়া হয়, আবার ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হওয়ার পর তা বাতিলও করা হয়। আমরাও তাই করি। এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে বাইরের দেশের ওপর নির্ভর করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারণ এ দেশের সব ওষুধই আবিষ্কার হয় বাইরে। আর এখানে বৈজ্ঞানিকভাবে কোনো ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দেওয়ার মতো ক্ষমতাও আমাদের নেই।'
ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটির ২৪৪তম সভায় বলা হয়, প্যারাসিটামল ৫০০ মিলিগ্রাম + ডিএল মেথিওনিন ১০০ মিলিগ্রাম কম্বিনেশন পদটিতে মেথিওনিনের (গবঃযরড়হরহব) পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও ঝুঁকির বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য টেকনিক্যাল সাবকমিটির সভায় উপস্থাপিত হলে সদস্যরা বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা করেন। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটির ২৪০তম সভায় বিএনএফ-৬১ রেফারেন্সের ভিত্তিতে ওই ওষুধটি অনুমোদিত হলেও বর্তমানে বিএনএফ ৬৯-এ তা অন্তর্ভুক্ত নেই। এ ছাড়া এ পদটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) এবং ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা পণ্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (এমএইচআর) কর্তৃক অনুমোদিত নয়। এ ছাড়া ওই কম্বিনেশন পদটিতে মেথিওনিনের উপস্থিতির কারণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে হৃদরোগ, ক্যান্সার, হেপটিক এসেফালোপ্যাথি, ব্রেন ড্যামেজ, এসিডোসিসের ঝুঁকি থাকায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এটি প্রত্যাহার করে নেয় ব্রিটিশ উদ্ভাবক কম্পানিটি। তা ছাড়া ১২ বছরের নিচের কোনো শিশুর জন্য মেথিওনিন সুপারিশকৃত না থাকায় এটি অবাধে ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে বিস্তারিত আলোচনা পর্যালোচনার ভিত্তিতে ওই ওষুধটি সর্বসম্মতক্রমে বাতিল করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা জানান, সাধারণ জ্বর বা ব্যথানাশক হিসেবে প্যারাসিটামল জেনেরিকের ওষুধের জুরি নেই। এসেনশিয়াল ড্রাগ ক্যাটাগরির এ ওষুধ পাওয়া যায় হাতের নাগালে। এমনকি জরুরি প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নিজের উপসর্গ বুঝে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় এ ওষুধ সেবন করতেও খুব একটা বাধা নেই। আর এই প্যারাসিটামলের কার্যকারিতাকে আরো দ্রুততর করতে এর সঙ্গে আরো কিছু যৌগ যুক্ত করা হয় অনেক ক্ষেত্রেই। ওষুধ বিজ্ঞানে এটাও অনুমোদন দেওয়া আছে। তবে বাংলাদেশে এ যুক্ত যৌগের কারণে এর আগে একাধিকবার প্রাণহানির ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। এমনকি এ ধরনের ঘটনায় শাস্তিও হয়েছে আদালতের মাধ্যমে। কিন্তু এবার যে ঘটনাটি ধরা পড়ল তা আরো বেশি বিপজ্জনক। কারণ এটা ইতিমধ্যেই কত মানুষের ক্ষতি করে ফেলেছে তার হিসাব করা দুষ্কর। এ ক্ষেত্রে এ ধরনের ওষুধের ওপর ভালোভাবে গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই ওষুধ কম্পানিগুলোর একেকটি ওষুধ উৎপাদন ও বাজারে নিয়ে আসার প্রবণতাকে দায়ী করছে সবাই। পাশাপাশি সরকারের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটির ওপরও এর দায়ভার বর্তায় বলে জানায় কেউ কেউ। কারণ যুক্তরাজ্যে ১৯৯৭ সালেই প্যারাসিটামলের সঙ্গে মেথিওনিন যৌগের মিশ্রণ বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটি কিভাবে ২০১১ সালে এ ওষুধটির অনুমোদন দিয়েছে তা বোধগম্য নয়।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাতিলকৃত প্যারাসিটামল ৫০০ মিলিগ্রাম + ডিএল মেথিওনিন ১০০ মিলিগ্রাম কম্বিনেশনের ওষুধটি একমি ল্যাবরেটরিজ 'ফাস্ট এম', বায়োফার্মা 'এসিটাসফট', ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল 'ফেভিমেট', এসকেএফ 'টামিপ্রো', ইবনে সিনা 'সফটপারা', লিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস 'মেটাক', নভেলটা বেস্টওয়ে ফার্মাসিউটিক্যালস 'নরসফট', অপসোস্যালাইন 'জিয়াসেট', অপসোনিন ফার্মা 'রেনোমেট', রেনাটা 'প্যারাডট', শরিফ ফার্মাসিউটিক্যালস 'প্যারামিন', সোমাট্যাক ফার্মাসিউটিক্যালস 'একটল এম', স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস 'এসি সফট', বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস 'নাপাসফট' ও জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালস 'পামিক্স এম' নামে বাজারে ছাড়ে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ফার্মেসিতে আগের মতোই এসব ওষুধ পাওয়া যায়। তবে স্কয়ার, বেক্সিমকো, এসকেএফের মতো স্বনামধন্য কম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ইতিমধ্যে তারা বাজার থেকে ওষুধটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
জানতে চাইলে অপসোনিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রউফ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সরকার অনুমোদন দিয়েছে বলেই তো আমরা এ ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করেছি। ওষুধটির মার্কেটিংও বেশ ভালোই ছিল। এখন কেন এটি আবার সরকার বাতিল করল, বুঝতে পারছি না।'
তিনি বলেন, 'আমরা মানুষের জীবন রক্ষার উদ্দেশ্যে ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করে থাকি। তবে কোনো ওষুধ মানুষের বিপদ ডেকে আনুক, তা আমাদের কাম্য নয়। মানুষের ক্ষতি করে আমরা ব্যবসা করতে চাই না। কিন্তু সরকার এ ওষুধ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিলেও মাত্র এক দিন আগে আমরা নোটিশ পেয়েছি। মাত্র সাত দিনের সময় দেওয়া হয়েছে ওষুধটি বাজার থেকে তুলে নষ্ট করে ফেলার জন্য। কিন্তু এত অল্প সময়ে এটা করা কঠিন হয়ে পড়বে। এ ছাড়া আমাদের মতো অন্য কম্পানিগুলোও ওষুধটি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছিল। এখন সবারই বড় রকমের ক্ষতি হয়ে যাবে।'