"আমার আম্মুর কোলন ক্যান্সার, লাস্ট স্টেজ।অনেক কিছুই করলাম,ডাক্তার আশা ছেড়ে দিয়েছেন। PMCH এ ৬৩০ নং কেবিনে ভর্তি।জানিনা কত দিন আছে আমার সাথে।আমার কাছের বন্ধুরাও এই কথা জানে না,সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলি,কষ্ট গুলো কাউকেই বুঝতে দেইনা।আমি মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিলাম শুধু আমার আম্মুর ইচ্ছাতেই।আমার কোন ইচ্ছাই ছিল না।আজ আমার আম্মু চলে যাচ্ছে আমার অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ দেখে।যেই দেখা করতে আসে আম্মু শুধু একটা কথাই বলে,"আমার ছেলেটা কি ডাক্তার হবে না?কেউ কি জানিস রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে কিনা?"আম্মুর দিকে তাকাতে পারি না।চোখের দিকে তাকালে বুকটা কষ্টে ফেটে যায়।আমার আম্মু এখনো আমার রেজিস্ট্রেশন দেখে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে।
ঈদের পরে শুনানি । আমি এটাও জানিনা সেই শুনানি দেখে যাওয়ার কপাল আমার আম্মুর আছে কিনা।নামায পরে একটা দোয়াই করি,আল্লাহ যেন ভাল একটা রেজাল্ট আমার আম্মুকে দেখার সৌভাগ্য দেন।কিন্তু এই দেশের "সিস্টেম" একটা মায়ের শেষ ইচ্ছাও পূরন করতে অক্ষম।"
এই কথা গুলো আমার খুব কাছের এক বন্ধু অনেক কষ্ট নিয়ে বলেছিল।কিন্তু কেন সে এমনটা বলছে???বলছে কারণ...
মহামান্য হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে ২০১৩/১৪ শিক্ষাবর্ষে বেসরকারী মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ গুলো সরকার নির্ধারিত স্কোর থেকে সামান্য কম স্কোরধারী প্রায় সাত শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করে ।এসব শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায় ভর্তির নূন্যতম স্কোর কমানো হয়েছে ।পরবর্তীতে সরকার হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে আপিল করলে ঝুলে যায় এসব শিক্ষার্থীর ভাগ্য ।আইনী জটিলতা থাকার কারনে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় গুলো তাদের রেজিষ্ট্রেশন দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে "প্রথম পেশাগত পরীক্ষা মে/২০১৫ "তে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয় এসব শিক্ষার্থীরা ।রেজিষ্ট্রেশনের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানব বন্ধন,মিছিল,প্রতিবাদ সভা সহ অনশন কর্মসুচির মত কঠোর কর্মসুচি পালন করলেও যথাযথ কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করেনি ।শিক্ষার্থীদের ৫ সদস্যের একটি কমিটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাথে দেখা করলে তিনি তাদের আশ্বস্থ্ করেন ।কিন্তু তার কোন বাস্তবায়ন হয়নি ।স্বাস্থ্য মন্ত্রী বরাবর স্মারক লিপি প্রেরণ করা হলেও তেমন কোন সাড়া পাওয়া যায়নি ।উপায়ান্ত না দেখে রেজিষ্ট্রেশন সংক্রান্ত আইনী জটিলতা নিরসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীরা ।বিচারের দীর্ঘ সূত্রিতার কারনে আজও এর সমাধান হয়নি ।সুপ্রীম কোর্টে এখনও অমিমাংসিত হয়ে রয়েছে এটি।তাই অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে হতাশায় দিন কাটছে তাদের ।তাছাড়া,এক বছর আট মাস পর মেডিকেল ছেড়ে অন্য কোথাও ভর্ভির সুযোগও থাকছে না।এমতাবস্থায় রেজিষ্ট্রেশন দেয়া না হলে প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে তথা সাতশ টি পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবে ।বেসরকারী এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া বেশীর ভাগই মধ্যবৃত্ত পরিবার থেকে আসা ।ছেলে-মেয়ের ডাক্তার হবার স্বপ্নকে পূরণ করতে হলে যে পরিমান ব্যায় ভার বহন করতে হয় তার জন্য এসব পরিবার বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই শেষ সম্বল জমি টুকু বিক্রি করে দেয়,কেউ পেনশনের টাকা তুলে এনে দেয় ।কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস !!! এরা এখনো জানে না রেজিষ্ট্রেশন হবে কি না ।আমরা কি পারি না এই হতভাগ্য শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে - তাদের ডাক্তার হবার স্বপ্নকে অক্ষুন্ন রাখতে???
আসুন সবাই-আমরা এক সাথে এসব ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াই ।
লিখে পাঠিয়েছেন -
মোঃ শামীম আহমেদ (অনিক)