নির্বাচিত ব্লগ

বর্গী মানে কি? কাদের কে বর্গী বলে ডাকা হতো?

বাংলায় বর্গী আক্রমণের সেই কবিতার পুরোটা কতজন জানেন? ছেলে ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো বর্গী এল দেশে বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কিসে।। ধান ফুর...

ফেসবুক, মার্ক জুকারবার্গ ও তার জীবনবোধ:

ফেসবুক, মার্ক জুকারবার্গ ও তার জীবনবোধ:
মার্ক জুকারবার্গ। পুরো নাম মার্ক এলিয়ট জুকারবার্গ(Mark Elliot Zuckerberg)। জন্মেছিলেন আমেরিকা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।বর্তমানে তিনি বিশ্বে বহুলভাবে পরিচিতদের মাঝে একটি অন্যতম নাম। তিনি ইন্টারনেটের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের(Facebook.com) প্রতিষ্ঠাতা। তার বয়স তেমন বেশি নয়। জন্মেছিলেন ১৯৮৪ সালের ১৪ মে। ২০১৩ সালের শেষে এসে তার বয়স মাত্র ২৮ বছর(+)। 



তিনি ২০১৩ সালের এপ্রিলে ফেসবুক কোম্পানীর চেয়ারপারসন এবং প্রধান কার্যনির্বাহী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। সেপ্টেম্বর ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত হিসাবমতে তার সম্পদের পরিমাণ এখন ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।( সূত্র: উইকিপিডিয়া)।
বর্তমানে বিশ্বে ফেসবুক ব্যবহারকারী ১২০ কোটির উপরে। ইন্টারনেটের আর কোনো সামাজিক মাধ্যম এত মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। অথচ, এই ফেসবুকের যখন প্রথম শুরু হয়েছিল তখন শুধুমাত্র সীমাবদ্ধ ছিলো হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি কেন্দ্রীক। তখন হার্ভাডের ছাত্র-ছাত্রীরাই শুধু এটির ব্যবহার করতেন। প্রথমদিকে নাম ছিলো “দ্য ফটো এড্রেস বুক”। এটি ছিলো অনেকটা ‘স্টুডেন্টস ডাইরেক্টরি’র মতো।এতে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের নাম, ফোন নাম্বার, তাদের বন্ধুদের নাম, পাঠরত বিভাগের নাম ইত্যাদি লিখে রাখতে পারতেন।
ছাত্র-ছাত্রীরা এর নাম রেখেছিলো ‘দ্য ফেসবুক’।এবং পরে ‘দ্য’ বাদ দিয়ে এর নাম হয়ে যায় “ফেসবুক”।

সময়টা ছিলো ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। হার্ভাডের এক ডরমিটরীতে তিনি প্রথম ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেন। পরে যখন ফেসবুক অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝেও ছড়িয়ে দেয়া হয় তখন ক্যালিফোর্নিয়ার পালো আলটোতে ফেসবুকের অফিস স্থানান্তর করা হয়।
এবং তারপর থেকে ফেসবুকের ইতিহাস বিজেতার ইতিহাস, স্রাফল্যযুক্ত ধাবমানতার ইতিহাস! এ যেন আসলাম, দেখলাম, জয় করলাম এমন একটি ভাব!

২০০৭ মালের মধ্যে জুকারবার্গ আর্থিক বিত্তের পরিমাপে পরিগণিত হয়ে যান “বিলিয়নেয়ারে”।
২০১০ সালে টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে তিনি বিশ্বের প্রভাবশালী এবং অর্থবিত্তসম্পন্ন ১০০ জনের মধ্যে নিজের স্থান করে নেন।
দ্য জেরুজালেম পোস্টের দৃষ্টিতে তিনি ২০১১ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ এখন পর্যন্ত অভিহিত হয়েছেন – Most Influential Jews in the World হিসেবে।
না, আমি আজ জুকারবার্গের জীবনী নিয়ে বা তার সাফল্য নিয়ে কথা বলতে বসিনি। কিন্তু তার জীবনের উত্থান বিষয়ে না বললে যেন তাকে নিয়ে কথা শুরু করা যায় না। তাই এত কথা বলা…
আমি আজ জুকারবার্গের জীবন দর্শন নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করতে চাইছি।
বিশ্বকে অবাধ ও উন্মুক্ত করার আকাঙ্খা

২০১২ সালেন ফেব্রুয়ারি প্রদত্ত এক বার্তায় তিনি বলেন-

Facebook was not originally created to be a company. It was built to accomplish a social mission — to make the world more open and connected.

অর্থাৎ, তিনি বলতে চেয়েছেন, ফেসবুক আদি থেকে কোম্পানী হিসেবে সৃষ্টি হবার জন্য গঠিত হয়নি। একটি সামাজিক লক্ষ্য উদ্দেশ্যকে কাজে প্রতিফলিত করার জন্যই তাকে গঠন করা হয়েছিলো। এবং এই লক্ষ্য হচ্ছে, পৃথিবী বা বিশ্বকে আরো অবাধ উন্মুক্ত করা ও কানেক্টেড বা পারষ্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করা।

২০১০ সালে Wired নামক ম্যাগাজিনে প্রদত্ত এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন-

The thing I really care about is the mission, making the world open

তিনি আরো বলছেন, বিশ্বের প্রত্যেকজনকে যোগাযোগের মধ্যে বা পারষ্পরিক কাছাকাছি নিয়ে আসার একটি সম্ভাবনা এবং সৃষ্টি হয়েছে এবং তার প্রয়োজনও অপরিসীম। সমাজকে ভবিষ্যতের জন্য রূপান্তর করতে এবং প্রত্যেকের কন্ঠ বা ভাব প্রকাশের সুযোগ উপস্থিত হয়েছে।
মিশন বা লক্ষ্য অনেক বৃহৎ, কিন্তু তার শুরুর পদক্ষেপ ছোট
তিনি তার বার্তা বা চিঠিতে বলেছেন-

Even if our mission sounds big, it starts small — with the relationship between two people.

অর্থাৎ, যদিও লক্ষ্যকে অনেক বৃহৎ বলে প্রতীয়মান হয়, কিন্তু তার শুরুর পদক্ষেপটা ছোট। দুইজনের মধ্যে পারষ্পরিক যোগাযোগ হতে তার শুরু।
অর্থবিত্ত বানাতে নয়, ভালো সেবা প্রদানের মাধ্যমে অর্থ আয়ই লক্ষ্য
তিনি বলছেন-

Simply put: we don’t build services to make money; we make money to build better services.

ফেসবুক ইন্ক বা ফেসবুক কোম্পানী অবশ্যই একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তা অর্থবিত্ত করার জন্য নয়, বরং ভালো মানের সেবা প্রদানের মাধ্যমে অর্থবিত্ত করাই তার লক্ষ্য।
তিনি বলছেন-

We’ve always cared primarily about our social mission, the services we’re building and the people who use them.

অর্থাৎ,সামাজিক লক্ষ্য বা মিশনকে প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে ধরেই সেবার উদযোগ নেয়া হয়।
ফেসবুক লুটপাটের যন্ত্র যে নয় তা বোঝা যায়!
জুকার বার্গের জীবন কাটে সাদামাটাভাবে

Mark Zuckerberg leads a fairly low-key life in California, where he lives with his girlfriend in rented accommodation within walking distance of the Facebook headquarters.

courtesy: the telegraph

মার্ক জুকার বার্গের জীবন কাটে খুবই সাদামাটাভাবে তার জীবন সঙ্গীনির সাথে ক্যালিফোর্নিয়ায় ফেসবুক অফিস থেকে হাঁটা পথের দুরত্বে।
হ্যাকার ওয়ে(Hacker Way)
সাধারন্যে বা গণমাধ্যমে ‘হ্যাকার’ এর মানে নেতি অর্থে ধরা হয়। এর মানে কম্পিউটার যোগাযোগ ভঙ্গ করা(The word “hacker” has an unfairly negative connotation from being portrayed in the media as people who break into computers.)।
কিন্তু জুকার বার্গ ‘হ্যাকার ওয়ে’ শব্দবন্ধটিকে ইতি অর্থেই ব্যবহারে উদ্যোগ নিচ্ছেন।
জুকার বার্গের ভাষায়-

Hackers believe that the best idea and implementation should always win — not the person who is best at lobbying for an idea or the person who manages the most people.

এর মানে করলে দাঁড়ায়, কোনো উত্তম আইডিয়া বা চিন্তাকে অবশ্যই জিতে আসতে হবে। তা(উত্তম আইডিয়া বা চিন্তা) কারো একার বা কোনো একাধিপত্যকামীর নিয়ন্ত্রনাধীন বা মনমেজাজ বা দয়ার উপর নির্ভরশীল হবে না।
Done is better than perfect
নিখুঁত কাজ প্রয়োজনীয়। কিন্তু জুকারবার্গ বলছেন- শতভাগ নিখঁত কাজের চেয়ে কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই মুখ্য। ফেসবুক কোম্পানী তাদের অফিসের দেয়ালে টাঙিয়ে রেখেছে- Done is better than perfect এই বক্তব্যটি।

শতভাগ নিখুঁত কিন্তু অসমাপ্ত কাজের চেয়ে কিছু ভুলত্রুটিসহ একটি সমাপ্ত কাজ অধিক গুরুত্বপূর্ণ।(সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো)

পাকাপাকিভাবে কোনো কাজ সমাপ্ত করা যাবে না। একটি কাজ শেষ করার পরে তার মধ্যে ভুল থাকবেই। বারবার চেষ্টা করে তার উন্নতিসাধন করতে হবে। কেউই ভুলের উর্ধ্বে নয়! এখানে অনেক না বলা কথা থেকে যাবার পরও প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা দরকার যে, জুকারবার্গ ১৩ বছর বয়স থেকে ছিলেন এথিইস্ট(Atheist)।
মার্ক জুকারবার্গের কাজের নীতি
লক্ষ্য অর্জনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ কর বা লক্ষ্যভেদী হও! (Focus on Impact)
গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাসমূহ সমাধান করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করাটাই মূখ্য। সাদামাটাভাবে বা আপাতদৃষ্টিতে কথাটি খুব সোজা! কিন্তু মার্ক জুকারবার্গের ভাষায়, কিন্তু আমরা দেখি প্রায় বেশিরভাগ কোম্পানীই এটি খুব দুর্বলভাবে করে থাকে এবং তারা অনেক সময় এতে ক্ষেপণ করে।

গতিই ধর্ম! (Move Fast)
দ্রুততালে কাজ করা মানে কিছু ভুল করা! এই বিষয়ের দিকে খেয়াল করে কাজ করার নীতি হচ্ছে মার্ক জুকার বার্গের নীতি। কিছু ভঙ্গ না করলে আপনি সম্ভবত তেমন দ্রুতভাবে কর্তব্য পালন করছেন না!
তিনি বলছেন-

We have a saying: “Move fast and break things.” The idea is that if you never break anything, you’re probably not moving fast enough.

সাহসী হও! উদ্যমী হও!(Be Bold)
বৃহৎ কিছু করা অথবা বলা যেতে পারে মহৎ কিছু করা মানেই তো ঝুঁকি নেয়া! সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হচ্ছে কোনো ঝুঁকিই না নেয়া!
এ যেন সমরবিদের কথা! নিষ্ক্রিয় প্রতিরক্ষা বলতে কিছু নেই!
নিজেকে উন্মুক্ত উদার করে তোল! Be Open
উন্মুক্ত পৃথিবীই সবথেকে ভালো পৃথিবী। জনগণের হাতে যতবেশি তথ্য থাকবে তারা ততো ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে এবং তাতে ফলাফলও আসবে ভালো। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা যেন বেশি পরিমাণে তথ্য পায় তাই-ই লক্ষ্য।
সামাজিক মূল্যবোধের উন্নতি সাধন( Build Social Value)
লক্ষ্যটি শুধু একটি কোম্পানী গঠন করা নয়। বরং সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করাও এর লক্ষ্য।
জুকারবার্গ বলছেন-

শুধু ব্যবসা করে মুনাফা অর্জন করা নয়, আমরা সবাই খেয়াল রাখি প্রতিদিনের কাজের মাধ্যমে আমরা কীভাবে সমাজব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন আনতে পারি, পৃথিবীকে কিছু দিতে পারি।(সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো)

সংক্ষেপে মার্ক জুকারবার্গকে নিয়ে আমার এই লেখা।
জুকার বার্গকে আমরা সাদাচোখে একজন উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী যায়-ই বলি না কেন, তিনি যে একটি জীবন দর্শন অনুসরণ করেন তা তার কথাটেই বোঝা যায়।
সেই জীবন দর্শন শুধু ব্যক্তিকে ঘিরে নয় এবং তা শুধু ব্যক্তিলাভের জন্য নয় এবং তা শুধু ব্যবসায়িক সমৃদ্ধির জন্য নয়।
তার জীবন দর্শনে সামাজিক মূল্যবোধ রয়েছে। রয়েছে সমাজের প্রতি দায়িত্ব ও মমত্ববোধ!
বয়সে অনেকের কাছে অনুজ এই জুকার বার্গ আমাদের চিন্তাকে মূল্যবোধকে কিছুটা স্বস্তি দি’ক এই প্রত্যাশা।
- সংগৃহীত
Share:

সর্বশেষ ব্লগ

মেডিকেল কলেজ

ডাউনলোড

সকল